শুভ আঢ্য
শুভ আঢ্যের কবিতা
৪
অর্থাৎ আমাদের দু'দুটি ঘরের ভেতরে আমাদেরই মৃতদেহ। একটিতে বেগমজান উড়ে এসে বসেছে, তার স্তনের তিলটি প্রকট। অপরটিতে ভেড়াগুলো ঢিবি থেকে টলটল করে নেমে এসে টিভির ভেতর ঢুকে পড়েছে। টিভিটিতে মনরোকে দেখাচ্ছে। কালো স্টকিংস ঠিক করতে করতে তার মাথার সোনালী শুঁয়োপোকাগুলো নেমে এসেছে ঈশ্বরের কাছে। মনরোকে অনেকটা বেগমজানের মতোই লাগছে। ঘরের বার্গারগুলি এক্সট্রা প্যাটি ধরে রাখতে পারছে না যেমন করে বিস্ফোরণের আগের মুহুর্তে তার উপকরণগুলি নিজেদের শান্ত রাখতে পারে না। এক্স ঘরে ক্রোমোজোমাল টেস্ট হবে অপরাধের, তাকে পিছমোড়া করে আনা হয়েছে। ওয়াই ঘরে মৃতদেহের পাশে ট্রানজিস্টরে বাজছে সামার অফ সিক্সটিনাইন। এসবের মধ্যে মহামতি ধর্মাবতার আইনের চোখের ব্লাইন্ডফোল্ড নিজে হাতে ঠিক করছেন। ভেড়াগুলি শুনতে পাচ্ছে দুটি ঘর থেকেই আলাদা আলাদা ঠিকানায় শেষ টেলিগ্রাম পাঠানো হচ্ছে। মৃতদেহগুলো এনামেলের থালার মতো আকাশ দেখছে। বস্তুতই ঘরদুটির ছাদ নেই।
৫
এক্স ঘরটিতে দেখা যাচ্ছে বিছানাটি। কিং সাইজ বেড। সাদা চাদর। তলায় বালির ওপর হেঁটে গেছে খুন হওয়া বালিকাসকল, তাদের বয়স, অপরাধী, সঠিক জানে না। সামনে থেকে জল আসছে। স্যামন মাছের গন্ধে সেখানে চলে আসছে আরেকটা স্যামন মাছ। অপরাধী ভাবছে মরিচের পিরিচে নুন দেওয়াটা অপরাধের কোন পর্যায়ে পড়ে, অথবা খেতে খেতে কোন ক্ষত তৈরি হয়? বিছানায় কোনো মহিলা নেই, অথচ মহিলা থাকার যথেষ্ট সম্ভবনা সেখানে মজুত। ওয়াই ঘরটিতে বিছানার উপর ম্যাপল পাতা, পাশে বরফ ও ফারের রঙিন কম্ফর্টার। দস্তানার ভেতর থেকে একটু একটু করে সেখানে অপরাধী বেরিয়ে আসছে। আশাপাশের গ্রাম থেকে ভেসে আসছে কোনো গ্রাম্য মেয়ের চিৎকার... পর পর এতগুলো ভোঁতা ছুরির পর অপরাধীটি সঠিক ছুরিতে শান দিচ্ছে। দুটি ঘরের টিভিতেই দেখা যাচ্ছে চন্দ্রগ্রহণ হচ্ছে। এক অপরাধীর একই সারিতে দাঁড়িয়ে পড়ছে আরেক অপরাধী। কিছুক্ষণ পর গ্রহণ ছাড়ার দৃশ্যতে কিং সাইজ বিছানাগুলি দুলে উঠবে।
৬
প্রতিটি গ্রাফিত্তির ওপর ছোট ছোট ভেড়াগুলো হেঁটে যায়। অথবা... ছোটো ছোটো ভেড়াগুলো হেঁটে গিয়েই এই গ্রাফিত্তি। এমনই শীর্ষক আলোচনার ভেতর এক্স ঘরের অপরাধী দেখতে পায়, মোমবাতি নিয়ে জ্বলে উঠছে জন্মদিনের মেয়েগুলো। তাদের ভেতর থেকে আকাশি রঙের পরিযায়ী পাখিরা গণবিলুপ্তির রাস্তা করে নিচ্ছে চেরির মতো। এইসব অপরাধ সরাসরি সম্প্রচারের সুবিধা ওয়াই ঘরে নেই। সেখানে ওই ঘটনাগুলির ছায়া কুড়মুড়ে বিস্কুটের মতো শুনতে লাগে। সেখানকার অপরাধী দেখতে পায়, অপেক্ষার ডালা টেনে পোশাকের ভেতর নেমে পড়েছে মনরোর ত্বক, তক্রিবন মাখনের মতো তার আঙুল ও হেলানো ঊরু। তার সামনে দাঁড়ানো কাকটির নখের নিচে ভেড়াগুলো ছাড়াতে চাইছে নিজেদের পশম। ওয়াই ঘরের আবহাওয়া দোকানে দোকানে বিক্রি শুরু হয়েছে। সে অপরাধীর সিদ্ধান্ত নিলামে ওঠার পর, সর্বোচ্চ দাম হিসাবে ধার্য হয়েছে আড়াইশো জন্মদিনের মেয়ে, যারা মোমবাতির ভেতর এক্স ঘরে জ্বলে উঠেছে বা গ্রাফিত্তিও হয়ে উঠছে।
লেখাগুলো চমৎকার লাগল। এই সিরিজটা চলতে থাকুক। এগুলোকে পরপর পড়লে, একটা আলগা, সাররিয়াল ন্যারেটিভ তৈরি হচ্ছে, যা নিজেই আবার নিজেকে ভাঙছে।
ReplyDeleteদারুণ লেখা।পুরোটা ফাটাফাটি।অবশ্য, এটাই প্রত্যাশিত
ReplyDeleteঅনেকদিন বাদে পড়লাম আপনাকে... মনে হল, আবার নতুন করে পড়তে হবে...পড়া প্র্যাকটিস করতে হবে..
ReplyDelete