DEHLIJ

বিদ্যুৎ মুখোপাধ্যায়

এই জনমে  (ধারাবাহিক)






 ১ 


মেঘ মুক্তি " নাটকের রিহার্সাল ফেরত এক তিন চার বছরের বালক বাবা মার হাত ধরে নেতাজী নগরের ছোট্ট বাড়িটাতে ফিরছে, সালটা ১৯৬০-৬১, পাড়ায় গোস্বামী কাকু, সন্তোষ কাকু, ইত্যাদির ব্যাডমিন্টন চলছে, "গোস্বামী, রাত্রে কি খেলে ? " বাবার প্রশ্ন, না তাকিয়েই কাকুর উত্তর  " মাসের জুল আর বাত , বলাইদা ! " বাত কথাটা শেষ হলো আর ঘাত করে শাটল অন্যের কোর্টের জমিতে.. বাবা শুধু বললেন  " বাঃ শুনেই লোভ লাগছে " ..আমার কানে তখনও বেজে চলেছে মেঘ মুক্তি বই এর গান : তোমার কুঞ্জ কুটির দুয়ার বন্ধ রেখো না প্রিয়া, বাহিরে মুক্ত শারদ চন্দ্র ডাকে হাতছানি দিয়া...সেদিন বুঝিনি, পিতৃ দত্ত সম্পত্তির মত বাবা কি নেশা ঢুকিয়ে দিয়ে যাচ্ছেন রক্তে, মারণেও যা নিঃশেষ হবে না, এ যেন সেই অমিতাভদার কবিতার মতো : বিষের হাঁড়ির মুখে একটু অল্প করে মৌ লাগানো....


' বিদ্যুৎ, নান্টু, রীনা, জয়া আ আ...' ঠিক ৬ টায় এক বৃদ্ধের হাঁক আসতো, আমরা উনাকে দাদু বলেই জানতাম, একপাল ছেলেমেয়ে নিয়ে রওনা দিতেন ওয়েরলেসের বুনো মাঠ পেরিয়ে  " বিধান চন্দ্র " ইস্কুলের দিকে, যেন ভেড়ার পাল, কেউ একটু দল ছুট হলেই দাদু লাঠি ঠুকে বলতেন  " হেই ...হেই.." মাস গেলে মাথা পিছু ২ টাকা পেতেন দাদু, ছেলে চলে যায় অসময়ে, ৩-৪ টে নাতি নাতনী আর ছেলের বিধবা বউ, এই ছিলো দাদুর সংসার, বৌমা সেলাই করতেন আর দাদু তিন কিলো মিটার হেঁটে বাচ্চা ছাড়তেন বিধান স্কুলে আবার আনতে যেতেন, পরনে ধুতি আর ময়লা পাঞ্জাবীর ওপর নস্যি রঙের কোট, চোখে পুরু ফ্রেমের গান্ধী চশমা, শীতে এই ছিল ওঁর ড্রেস...শীত টাই বেশী করে মনে আছে.. ফেরতা পথে  ' বের ' কুড়োতুম আমরা...আর সরস্বতী পুজোর দিন ইস্কুলের ফাংশন দেখে দাদুও ফিরতেন আমাদের সঙ্গে সেই সন্ধ্যে বেলা, সেদিন বাবা মায়েরা ও থাকতেন, মনে আছে একটা লঘু নাটক হয়েছিল বিদেশী গল্পের অনুবাদ, একটা চোর কে পুজো করার নামে গৃহ কর্তা পৈতে খুলে বেঁধে ফেলবে, কি হাসির ধুম, সেদিন দাদুকেও দেখতাম এক ভাঁড় চা হাতে আর একটা বিড়ি ধরিয়ে মুচকি মুচকি হাসছেন...তারপর মাচায় রঙিন কাঁচ ফেলে আলো পড়লো, নৃত্য নাট্য : প্রকৃতি, দই ওলা, চুড়ি ওলা, পাড়ার মের দল, মা ও শেষে ভিক্ষুক আনন্দ...চণ্ডাল কন্যার সেই অদ্ভুত উক্তি...শ্রাবণের কালো যে মেঘ, তারে যদি নাম দাও চণ্ডাল, তবে কি জাত ঘুচিবে তার, অশুচি হবে কি তার জল ? তিনি বলে গেলেন আমায়, নিজেরে নিন্দা কোরো না, মানবের বংশ তোমার মানবের রক্ত তোমার...বোধ করি অজান্তে সেই দিন ই রবিঠাকুর রক্তে বাসা বাঁধলেন, যে বন্ধন সারা জীবনেও আর খোলা গেলনা...


' এরাও মানুষ ' বইতে মিন্টু বলে একটা ছোট্ট রোল পেলাম আমার আবৃত্তির সুবাদে, বয়েস তখন ৫, তার পরের বছর গোপী কাকা ( যাযাবর গোষ্ঠী র প্রথম ডিরেক্টর, রবিনদার ও আগে ) বাবাকে ডেকে বললেন : "ছেলে কার" বই করবো, তুই হিরো, কুণাল বোস, বাবা বললেন কিন্তু আসল ওই বাচ্চাটা টমেটো ? গোপিকাকা বললেন : কেনো তোর ছেলে ? বাবা আকাশ থেকে পড়লেন, ওঁর বোধ হয় আমার অভিনয় শৈলীর ওপর তেমন আস্থা ছিলো না, পরবর্তী কালে ও দেখেছি উনি ছিলেন আমার অভিনয় এর সব থেকে বড় ক্রিটিক, সে কথায় আসছি আরো পরে, আসলে আমার গুরুকুল শিক্ষার প্রারম্ভ বাড়িতেই যে শুরু হয়ে গেছে সে কথা পরে বুঝেছি যখন কাকা নানা গল্পের মাধ্যমে, তৎকালীন ভালো ডিরেক্টর, অভিনেতা দের উপমা দিয়ে বলতেন স্টেজ এ এটা করতে হয় ওটা করতে নেই ।   শিকে ছিঁড়ল তারও পরের বছর, দে মশাই ( আজও পুরো নাম জানা নেই ) বিবেকানন্দ করবেন আমি বিলে, আর শচিপতি কাকু নরেন, আর নাটকের প্রধান উপদেষ্টা আমার পরম শ্রদ্ধেয় পরেশ কাকা ( টুলাদার দাদা আর পলাশের পিতৃদেব ), তখনও সুবিমল জেঠু কে জেঠু বলেই জানি, পুতুল কাকার নাম শুনেছি মাত্র, অমর হোর, অজয় চ্যাটার্জি এঁরা তখন উদীয়মান ডিরেক্টর, বড় আর ভালো ডিরেক্টর বলতে যা বোঝায় পরেশ কাকার অভিব্যক্তিতে ঠিক সেটাই টের পেলাম, বড়দের বড়র মতো, যুবক দের তাদের মতো, মহিলাদের তাঁদের মতো আর ছোট দের তাদের মতো বোঝাবার কি অসামান্য ক্ষমতা !  এখনো বাঁধানো ছবিতে ফুল লেংথ ড্রামা কম্পিটিশনের ব্যক্তিত্বদের দেখলে মনে একটা শিরশিরে ভাব অনুভূত হয়, স্টেজে স্টার স্টাডেড শিল্পীর সমারোহ প্রাইজের দিন, চুনু মিত্র, পরেশ দাস, নন্দিতা সেন আদির সঙ্গে দাড়িয়ে আছি আর দুপাশে দুই দিকপাল মন্মথ রায় আর হুমায়ূন কবীর... ততো দিনে টেন্টের স্কুল ছেড়ে পাকা বাড়ির স্কুলএ, যদিও মন আজও পড়ে থাকে সেই টেন্ট এই, অনুভব করলাম, বিবেকানন্দ র প্রাইজ উইনিং রোল আমাকে শুধু বাইরেই নয় স্কুলএও স্টার’এর সম্মান এনে দিয়েছে, কারণ সেসময় আইফেক্স এ যে একবার বাজী মাত করতে পারতো তাকে সঙ্গে সঙ্গে পুরো দিল্লীর বাঙালিরা চিনে যেতো, এর কারণ ছিল দুটো, একঃ শহরটা ছোট ছিলো তাই বঙ্গ সমাজ ছিলো আঁট আঁট, আর দুইঃ তখন প্রায় সকলেই নাট্যামোদি ...এই পাকা বাড়ি স্কুল  "শ্যামা প্রসাদ বিদ্যালয় " এই দুটো বন্ধুর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা, যাদের মাথাতেও থিয়েটারের কেরা পোকা আমার মতই অল্প বয়েসেই ঢুকেছিল, একটা প্রদীপ দাস ( সুশান্তদা ,  জয়ন্তদা র খুড়তুতো ভাই ) আর একজন সেই জিরো বয়সের বন্ধু ( আমি সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর, একই বছরে জন্ম আমাদের ) কল্যাণ ব্রত ঘোষাল, কদিন আগে যার  " নাট্য বন্ধু" তে আগমন, এছাড়াও বলবো আমি ভাগ্যবান, একরাশ দিদিমণি আর মাস্টার মশাইরা আমাদের পৃষ্ঠপোষক ও আবার উৎসাহ দাতাও, স্বয়ং দে মশাই এর সহধর্মিণী শেফালী দি ছিলেন নাটকের পোকা, কেউ কেউ শেকসপীয়র করাতেন, আর আমাদের থেকে দুই তিন বছরের সিনিওর ছিল যারা তারা থাকতে আমরা কখনো স্কুলএ কোনো বড়ো রোল পাবো স্বপ্নেও ভাবতে পারতাম না,  একটা নাম আজকের দিনে বললেও ব্যাপারটা স্পষ্ট হবে : শিপ্রা দাস (সেসময় শিপ্রা ঘোষ ), তড়িৎ কান্তি মিত্র, দীপঙ্কর খান, শৈবাল মল্লিক, ত্রিদিব চ্যাটার্জি, এদের আশপাশে ঘোরাঘুরি করা ছাড়া ক্লাস সিক্স সেভেন অবধি আমাদের আর অন্য কোনো গতি ছিল না, তবে ওই আজকের " মুক্তধারা" র মত সেদিনের আইফেকস আমাকে খানিক পেডে স্টাল দিয়েছিল, তাই সিক্স না সেভেন্থ ক্লাস এ এসে সত্যিকার শিকে ছিঁড়ল, কিন্তু তার আগে একটা মজার ঘটনা বলি


স্কুল ( এই বয়েসেই শেখানো হলো ইস্কুল নয় ওটা স্কুল ) এ ইন্সপেক্টর আসবেন, " পথিক ও বুড়ো " নাম দিয়ে  "অবাক জলপান" এর অংশ ক্লাস এই করে দেখাবে ফোর ফাইভে র ছাত্ররা, রোল ২ টি কিন্তু ক্যান্ডিডেট ৬ জন , তাই স্নেহলতা দিদিমণি বললেন যে যে ধুতি আনবে তাদের আমি আগে দেখবো কে কেমন মুখস্ত করেছ, যে দুজনের ভালো হবে, কাল তারাই ইন্সপেক্টরের  সামনে অভিনয় করে দেখাবে, কাল ইন্সপেক্টর আসার আগে আমি পরীক্ষা নেবো... আমি আর কল্যাণ শেষেরটা মন দিয়ে শুনে সেদিন স্কুল এ টিফিন টাইম এই পার্ট মুখস্থ করে ফেললাম, সবাই ভাবলো এদের যা তাল মিল এরাই করবে ! আমরাও তাই ভাবলাম, আর তালে গোলে ধুতির কথা বেমালুম ভুলে মারলাম, স্কুল পৌঁছে দেখি দুজন ধুতির কথায় পিছিয়েছে, আমরা দুজন পার্ট এ এতই মশগুল যে ধুতি না নিয়েই স্কুল পৌঁছেছি, ধুতি আর পার্ট একসঙ্গে তৈরি করেছে দুজন, ব্যাস ! রিজেক্ট হয়ে গেলাম !! আমাদের তখনও কি কাকুতি, দিদিমণি একবারটি আমাদের পার্ট দেখুন, দরকার হয় ওদের ধুতি পরে করবো ( কি অডাসিটি ! যারা দুটো সর্তই মেনেছে আমাদের কনফিডেন্স তখনও বলছে : একবার উনাকে দেখাতে পারলে ওরা দুজন রিজেক্ট হয়ে যাবে আর ওদের ধুতি পরে আমরা বাজী মাত করবো ) তাতে উনি আরো চোটে বললেন : একদম নয়, কিসের জন্যে ধুতি আনো নি থাকা সত্বেও, ওরা যদি তোমাদের থেকে একটু কম ও করে সেও ভালো, আমি ওদের দিয়েই করাবো, আর আজকের জন্যে বিদ্যুৎ তোমার আর কল্যাণের মুখ ও দেখতে চাইনা আমি তো পার্ট !!! ...মুখ বেজার করে আমরা দেখলাম পরিদর্শক মহাশযয়ের সামনে বাজী মাত করে বেরিয়ে গেলো আমাদেরই দুই সহপাঠী একজন আনন্দ ব্যানার্জী আর অন্যজন হোলো রতন সিনহা আমাদের বিশ্বজিৎ (সিনহা) র মেজদা.....

-ইতি নাট্যাভিনয় তন্ত্রে প্রথম জনম ।



পরের বছর সৌভাগ্য-লক্ষ্মী মুখ তুললেন : শাহজাহান’এর লাস্ট সিন, প্রবীর চক্রবর্তী আওরঙ্গজেব, আমি শাহজাহান আর শুচিস্মিতা জাহানারা, ক্লাস রুম এই, ইন্সপেক্টরের সামনে, খুব উত্তেজিত ছিলাম, নাটক পিকএ, এমন সময় শুচিস্মিতা ক্যাচালটি পাকালে, চরম প্যাথসের  মুখে বলে বসে রইল : পিতা ! দারির হত্যাকারীকে ক্ষমা ! ( পরে বলেছিল দারা কথাটা ওর কিছুতেই মাথায় না এসে দাঁড়ি দাড়ি দড়ি এরকম সব শব্দ মাথায় আসছিল )...হোল ক্লাস উচ্চস্বরে হেসে উঠতে পরিদর্শক ধমকে উঠলেন : ওকি হাসছ কেন ? ওকে বলতে দাও, ওপাশে ফিরে কথা বলতে গিয়ে দেখি অনুতপ্ত আওরঙ্গজেব জাহানারা কে মুখ ভেংচাচ্ছে আর জাহানারা সেই দেখে ফিক ফিক করে হাসছে, ব্যাস ! আমার মেজাজ গেলো খিঁচরে, নিজেকে সামলে যতই কাঁপা গলায় বলতে যাই : ক..কথা কসনে জা.হা..নারা ! পুরোটাই যে আর্টিফিসিয়াল হচ্ছে সেটা টের পাচ্ছিলাম বেশ...সেদিনই ঠিক করলাম, এদের সঙ্গে আর অভিনয় করবো না, সিনিওরদের দেখেছি তারা কত সিরিয়াস নাটক করার সময়...আর এরা !  ছিঃ ! দিলে আমার পার্টএরও বারোটা বাজিয়ে (আমার অকাল পক্ব বুদ্ধি আমায় সেদিনই ইঙ্গিত দিয়েছিল : থিয়েটার একার জিনিস নয়, এটা দলগত ব্যাপার, সবাই ভালো করে না করলে আমার লাফালাফিই সার )

বুঝলাম যাকে সৌভাগ্য লক্ষ্মী ভেবেছিলাম সেটা আসলে দুর্ভাগ্যেরই নামান্তর, খালি মনে হোতো এইভাবেই পরিদর্শকের  সামনে বছর বছর হেদাবো, ইতি মধ্যে ভোলা মাস্টার হোল, সুবিমল জেঠুকে ততদিনে চিনেছি, কিন্তু বয়েস এ মানাবে না দেখে সেই খানেও রোল পেলো স্কুল এ আমার থেকে বড়ো বিবেকানন্দদা, আর ছোট্ট একটা রোল সেটা আরুনাংশু করলো (দীপক দার বড় শালা) অর্থাৎ দিল্লী স্টেজ এও আমি নিল ! দু বছর কেটেছে, তাও মন কেমন করতো পুরনো সেই টেন্ট’এর স্কুলের জন্য, বিশেষ করে শীতের শেষে, দাদুর লাঠি, ঘষা কাচের চশমা, মলিন চাদরের  কথা ভেবে লুকিয়ে কাঁদতাম, ততদিনে আমরা বিনয়নগরে শিফট করে গেছি, দাদুর ও কোনো সংবাদ আর কেউ দেয়না, স্কুল বাস এ যাতায়াত করতাম আর দাদুর কথা ভাবতাম, আমার বালক মনে সেই দুঃস্থ , স্বনির্ভর , জরাজীর্ণ বৃদ্ধ সেই থেকেই এমন ঠাঁই করে নিয়েছিলেন যে আজ তাঁর কথা সবাইকে জানাতে পেরে মনে হচ্ছে, সেসময়ের না করা প্রণাম যেন আজ সারা হচ্ছে... জীবনে যত পূজা হলো না সারা, জানি গো জানি তাও হয় নি হারা...

নেতাজীনগর এ থাকতে সেই ০-৫ বয়সে কতো ভালো অভিনেতাদের দেখতাম, বুবু কাকু, অভিনেত্রী দের মধ্যে ইভা নাগ, শেফালী বোস, বুলবুল কাকীকে আমি যাত্রাও করতে দেখেছি, "সমুদ্র শাসন" বইতে উনার যা ক্রিটিকাল পার্ট ছিল আমার ধারণা ওই পার্ট পরবর্তী কালে ফ্লোরা দি আর ফুলুদি (উৎপলদার বোন) সামলাতে পারত,আর ছিল হাবুকাকা (অশোক চ্যাটার্জি ), ওই রকম সাপ্ল কমেডি খুব কম লোককে করতে দেখেছি, কোন একটা বইতে উকিলের জেরা, হাবু কাকা এক সাইজ বড়ো প্যান্ট পরে নেমেছে আগে বোঝা যায় নি, বিবাদী পক্ষ কে যেই  "  চাওপ  " বলে ধমক লাগায় প্যান্ট নেমে যায়, আর ফাইল সামলে দু হাতের কনুই এ প্যান্ট তুলে আবার জেরা শুরু করে...এদিকে জেরার বিষয়বস্তু কিন্তু সিরিয়াস ! এই মিশ্রণ যে ওই না কমিক না সিরিয়াস রোলের জন্যে কি কঠিন সেটা আজও হাড় এ হাড় এ টের পাই...আর এক দম্পতির স্মৃতি আজও অমলিন, বাড়ীর উল্টো দিকের চ্যাটার্জি মাসী আর মেসো, ছুটির দিন সকাল মানেই ভোর হতেই আমি মেসোর মুরগীর খাঁচার সামনে, একটা গান মেসোকে ছড়া কেটে শোনাতে হবে, মেসোই শিখিয়েছিলেন (সুরটা ইংরাজি ফোক ধরনের) : ডিম থেকে বেরুলো মুরগীর ছা ..এক পা দু পা আরো এক পাহ্...গুটি গুটি এগিয়ে, চোখ দুটো পাকিয়ে ..চে দেখো মজাদার কি বাঃ বাঃ...মেসো খুশি আমি আরো খুশি কারণ আমার পারিশ্রমিক হিসেবে এক্ষুনি একটা ডিম আমার হাতে তুলে দেওয়া হবে... বড় স্কুল, বিনয়নগরের বাড়ি, স্কুল বাস এসব কিছুই ভালো লাগতো না, মন পড়ে থাকতো টেন্টের স্কুল, দাদু, মাসী মেসো , মুরগীর খাঁচায় আর দাদুর সঙ্গ ধরা সেই বুনো মেঠো পথে, যেখানে  "বের" কুরন যায়, যেখানে শীত শেষের দুপুরে উকো পাখির সঙ্গে তাল মিলিয়ে আর মন কেমন করা আসন্ন বাসন্তী হওয়ায় ওয়ারলেসের শব্দ ভেসে আসে বিপ বিপ বিপ...ওই দূরে কোথায় যেন ধলা কুয়া বলে একটা জায়গার বাঁকে পিচের রাস্তাটা হারিয়ে গেছে...যেখান থেকে হাবু কাকা রোজ সাইকেল এর হেড লাইট জ্বালিয়ে অফিস থেকে ফেরত আসে সন্ধেবেলা, ক্রিং ক্রিং ক্রিং..যেসময় আমার পড়তে বসার সময়, ছাতিম ফুলের গন্ধ যেসময় বালক কে আমন্ত্রণ জানায় সহজতম আনন্দের.....

একদিন তো মা কে বলেই ফেললাম, ধুর ছোটো বেলাতেই ভালো ছিলাম, বাড়িতে হাসাহাসির ধুম পড়ে গেলো, একটা ১১-১২ বছরের ছেলে বলছে ছোটবেলা ভালো ! পড়ায় মন দিলাম, একটু উন্নতিও হচ্ছিল, কিন্তু সে বছরই স্কুল এ ঝালাপালা নাটক হোলো আর আমরা অনেকেই বড়ো দের সঙ্গে অভিনয় করার সুযোগ পেলাম, কিন্তু আশ্চর্য, এরকম একটা ফাটাফাটি শো হওয়া সত্বেও আমার মনে দাগ কেটে গেলো চিত্রাঙ্গদা নৃত্য নাট্য, সেই প্রথম শিপ্রাদিকে চাক্ষুষ দেখি , তাও নাটকে নয়, ডান্স ড্রামায়, চিত্রাঙ্গদার ভূমিকায়...পুরুষের বিদ্যা করেছিনু শিক্ষা লভি নাই মনো হরণের দীক্ষা, কুসুম ধনু অপমানে লাঞ্ছিত তরুণ তনু....কিম্বা : ছি ছি কুৎসিত কুরূপ সে, হেন বঙ্কিম ভুরু যুগ নাহি তার, হেন উজ্জ্বল কজ্বল আঁখিতারা, সন্ধিতে পারে লক্ষ্য কিণাঙ্কিত তার বাহু, বিঁধিতে পারেনা বীর বক্ষ কুটিল কটাক্ষ শরে, নাহি লজ্জা নাহি শঙ্কা, নাহি নিষ্ঠুর সুন্দর রঙ্গ, নাহি নীরব ভঙ্গির সঙ্গীত লীলা ইঙ্গিত ছন্দ মধুর...অথবা শেষ দৃশ্যে : আমি চিত্রাঙ্গদা, রাজেন্দ্র নন্দিনী....কীরকম একটা ঘোর নিয়ে বাড়ি এলাম । একটা ছোট্ট পার্ট করলাম "বিসর্জনের বাজনায়" বইতে, কিস্যু না বুঝেই, পরে জেনেছিলাম সেটা হরিহর জেঠুর লেখা প্রথম এবস্ট্রেক্ট বই ছিল নবনাট্যমএর, সেসময় তরুণ রায় দীপান্বিতা রায় আসতেন, শম্ভু মিত্র আসতেন দল নিয়ে, আসতেন সত্য ব্যানার্জী আর গুরুদাস মলিনা, কিছু বোধ গম্য হোত কিছু  হোত না, যেমন সেসময়  "এবং ইন্দ্রজিৎ" নাটকের কিছুই বুঝিনি, বাদল সরকারের মাহাত্ম্য বোঝার বয়েস হয়নি, কিন্তু সব দেখতাম আর সঙ্গে সোশাল আর হিস্টরিকালও, এই সময় নাগাদ ডাক্তার মনী রায়’এর উদ্যোগে শাহজাহান হলো- আইফাক্স হলএ, এতবড়ো স্টারকাস্ট এর আগে দেখিনি : শাহজাহান সুবিমল বন্দোপাধ্যায়, দ্বারা নোনি পোদ্দার, সুজা তিমির দত্ত, আওরঙ্গজেব বলাই মুখোপাধ্যায়, মোরাদ মনী রায়, সুলেমান বলাই চক্রবর্তী, মোহাম্মদ কানাই মুখোপাধ্যায়, শায়েস্তা খাঁ ফনি রায়, জিহণ আলি নারায়ণ গাঙ্গুলি, যশোবন্ত সিংহ রবি রায়, জাহানারা শ্যামলী ঘোষাল... বাবার সেই কণ্ঠ : আকাশ মেঘাচ্ছন্ন, ঝড় উঠবে, একটা নদী পার হয়েছি এই আরেক নদী, ভীষণ কল্লোলিত তরঙ্গ সংকুল, তবু..তবু পার হতে হবে...কিম্বা দিল্লী দরবার : মহারাজ যশোবন্ত সিংহ ! আপনি নর্মদা যুদ্ধে দারার পক্ষ গ্রহণ করেছিলেন বলে আমাদের অপ্রীতি ভাজন নন, মহারাজের রাজ ভক্তির নিদর্শন পেলে আমরা অচিরেই মহারাজকে আত্মীয় বলেই গণ্য করবো...হাফ টাইমে ড্রপ সিন পড়ছে ...নিজের ডিপ্লোম্যাসিতে আওরঙ্গজেব দরবারকে তাক লাগিয়ে দিয়ে সবাই চলে যাবার পর স্পট লাইটের আলোয় দাঁড়িয়ে জাহানারাকে শ্রিউড উচ্চারণে বলছে : আমি প্রতিজ্ঞা করছি ভগিনী যতদিন আমি জীবিত আছি তোমার আর পিতার কোনো অসম্মান আমি হতে দেবো না ! অন্য স্পট লাইট এ জাহানারা : ( উর্নি সরিয়ে শ্যামলী জেঠি র সেই চকিত চাহনি ) আবার বলি আওরঙ্গজেব, চমৎকার !!....তবে শেষ দৃশ্যে সুবিমল জেঠু রাতের শেষে ওস্তাদের খেল দেখবার পর মনে ভেবে ছিলাম, এরকম করে করতে না পারলে শাহজাহান করা বৃথা : কথা কোস নে জাহানারা ! পুত্র এসেছে পিতার কাছে ক্ষমা ভিক্ষা করতে...ওরে কথা কোস নে...আমার সৌভাগ্য যে সে রাত্রে দিল্লীর সর্ব কালের শ্রেষ্ঠ অভিনয় গুলির একটি অন্যতম অভিনয় রজনীর সেদিন সাক্ষী হয়ে রইলাম সেই নবীন বয়সে....

সেই অবাক জলপান, আর পথিক আর বৃদ্ধ নয়, এডিটেড স্ক্রিপ্ট নয়, পুরো বই, সিনিয়র সব বেশীর ভাগ স্কুল পাশ করে বেরিয়ে যাচ্ছে কিম্বা পরের বছর বোর্ড, আমি কল্যাণ, অমিতাভ দত্ত, আমরা সব আসরে এতদিনে জাঁকিয়ে বসে ছি, আমার আর ওর সেই বহু প্রতীক্ষিত রোল, আমি পথিক আর ও বৃদ্ধ : বলি ঘুমড়ির জল খেয়েছো কোনোদিন ? ঘুমড়ি হচ্ছে আমার মামাবাড়ী, আঃ আদত জলের জায়গা...সব শেষ করে শিক্ষক শিক্ষিকা প্রিন্সিপাল আর অগণিত ছাত্র ছাত্রীর করতালির মধ্যে যখন গ্রীন রুমে এসে পোশাক বদলাচ্ছি তখন আমরা যেনো বহু প্রতীক্ষিত রাজ্য জয় করে এলাম, এখন হলে বলতাম : বারে বারে ঘুঘু তুমি খেয়ে যাবে ধান...??!!!

উৎপলা দি শেক্সপীয়ার করাতেন, ত্রিদিব পাশ করার পর শাইলক’এর রোল খালি হলো, ওহ কি দাঁত ভাঙ্গা উচ্চারণ রে বাবা : ইফ দাই হাউস বি ট্রাবলড উইথ এ রেয়াট ন দাই বি প্লীজড্ড টু হ্যাভ টেন থাউসঅ্যান্ড ডাক্যাডস টু হ্যাভ ইট ব্যানড...তবু রোল টা লোভনীয় ছিল... আস্তে আস্তে অন্য এক জগতে মিশে যাচ্ছিলাম, কলকাতা থেকে যাঁরা আসতেন তাঁদের মধ্যে সে সময়তেই উৎপল দত্ত খুব বেশী প্রভাব ফেলেছিলেন, কল্লোল অঙ্গার ব্যারিকেড তিতাস টিনের তলওয়ার...ওদিকে মুক্তিযুদ্ধ আর এদিকে বাবার খবর পড়া...সেই উপলক্ষে রেডিও এলো বাড়িতে, ছোটকাকা আনলেন।  ভাই তখন ছোট, একবার করে রেডিও এ বাবার গলা শোনে আর তার পেছনে উঁকি মারে ..যদি জেঠু কে দেখতে পায়, আর আমায় বড়ো দের মতো ধমকায় : খোকা, পড়তে বোস , জেঠু বকছে...অনেক নাম আজকের দিনে মনে পড়ে না কিন্তু মুখ গুলি স্পষ্ট, বুবু কাকু আর হাবু কাকুর একজন দিলীপ অন্য জন অশোক । একজন চাটুজ্জে অন্য জন বাঁড়ুজযে, এটুকুই মনে আছে, চুনি কাকুর সন্তোষ কাকুর টাইটেল জানা নেই আর গোস্বামী কাকুর নাম আজও অজানা, বাটানের দাদুকে আমরা জানতাম ত্রিবেদী মশাই, সাত্বিক বামুন বলে, আর যিনি নেতাজী নগরের পুজো শুরু করিয়ে এতো সুন্দর পুষ্পাঞ্জলি মন্ত্র পড়াতেন তাঁকে মৈত্র জেঠু বলেই জানতাম, মৈত্র মশাই, আইফ্যাক্স স্টেজে সেদিন বোধ হয় চাঁদু কাকা (পরেশ দাস ) হুমায়ূন কবীর আর মন্মথ রায়’এর সঙ্গে আরও একজন প্রখ্যাত অভিনেত্রী ছিলেন বনানী সেনগুপ্ত, তাঁর কথাতেই মনে পড়ে গেলো বনানী মুখিয়া, আরতী গণ চৌধুরী, ইরা পিসী, আর সুশীলা পিসির কথা, ওহ্ জগদীশ বাবুর বইতে এক গুচ্ছ হ্যাঙ্গার নিয়ে বুড়ি বিক্রী করছে, কি মারাত্মক স্ক্রিপ্ট আর কি সহজ সাবলীল অভিনয়, মনে পড়ে গেলো ধীরেন জেঠু, গঙ্গা জেঠু ( দিপকদার পিতৃদেব ), দুর্গা জেঠুর অভিনয়, আর প্রতাপ সেন, শংকর সান্যাল আর সিতাংশু কাকু নিত্যা নন্দ কাকুর ব্যাক স্টেজ ম্যানেজমেন্ট, অশোক মিত্র আর নাড়ুদা র কথা ( তালে গোলে ওর পদবী ও মনে পড়ছিল না বোধ হয় ভট্টাচার্য )

অদ্ভুত এক বয়ঃসন্ধিক্ষণ, ক্লাস টেন তখন সরস্বতী পুজো করতো, কারণ ইলেভেন ক্লাস এ বোর্ডের পরীক্ষা হোত, নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের ভীমবধ নাটকে পরিচালক অভিনেতা আমি, কল্যাণ তখন স্কুল বদলেছে, প্রদীপের সঙ্গে জুটি বাঁধলাম, একে অ্যাকোমডেট করো, ওকে করো, বন্ধুদের  ( তা সে আমার সাইন্স ব্যাচ না হলেও ) ক্লাস ফাঁকি মারার জন্যে কাস্টিং লিস্ট বাড়িয়ে দাও, টিচার দের ঢপ মারো, সেক্রেটারি সেবস্টিন গোমেজকে খেলার মাঠে ধরে নাটকের খরচ আদায় করে কিনারী বাজার ছোট, সব থেকে ফাঁসলাম পুজোর আগের দিন, সবাই  " ইয়াদো কি বারাত " দেখতে পালিয়ে গেলো আর আমাকে আর প্রদীপ কে পাকরে ফেললেন বিমল স্যার  ' ওসব গদা টদা পরে হবে, এখন ডেকোরেশন এ সাহায্য কর  ! ' স্যারের হুকুম, অমান্য করা যায় না, তারওপর স্যার ভারী রেগেও আছেন, একটা সাহায্যের লোক পাচ্ছেন না, পরদিন পুজো, ডেকোরেশন আজই কমপ্লিট করতে হবে, কাকে যেনো বলেছিলেন লেই বানিয়ে আনতে, সে মূর্খ না জেনেই হোক বা সিনেমা দেখার তাড়াহুড়ো তেই হোক শীতের দিনে একরাশ জল ঢেলে দিয়েছে আটার লেইতে, ক্যান্টিন থেকে ডালডার টিনটা যে গরম করে আনবে সে বুদ্ধিও নেই আর ফুরসত তো নেই, স্যার অপরিসীম পরিশ্রমের ফাঁকে আমাদের দুজনকে কথা শোনাচ্ছেন : বলি ডেকোরেশন ইনকমপ্লিট থাকলে পুজো টা হবে কোত্থেকে ? ভোগ পাবে কারা ? আর সন্ধ্যে বেলা নাটক ই বা হবে কোন উদ্দেশ্যে ?...... আঁহ ! নাটক হবে না আ আ !! ( বুকটা ছ্যাঁত করে উঠলো দুজনের, যেনো মা সরস্বতী সকালের পুজো নয় বিকেলে আমাদের নাটক দেখতেই আসবেন ! ) তাড়াতাড়ি হাত চালালাম, এর ফাঁকে একবার স্যার কে বললাম : লোধী রোডের যারা কাছে পিঠে থাকে তাদের একবার ডেকে আনবো স্যার, এতক্ষণে নিশ্চয়ই সিনেমা শেষ...."শেষ" এই শব্দটা স্যার শেষ করতে দিলেন না, হুংকার দিয়ে উঠলেন : খবরদার ! কোত্থাও যাবি না !! ওদের একজনকেও যদি আমার ত্রি-সীমানায় দেখি তবে এতক্ষণ যা বানিয়েছি সব ছুঁড়ে ফেলে দেবো !!!  আতঙ্কে  " না না স্যার ! আমরা দেখছি স্যার " বলে স্পীড বাড়ালাম আর মনে ভাবলাম উনি যদি সব ছুঁড়ে ফেলেই দেন তাতে তো উনারি পণ্ডশ্রম আর কার কি ?  ছাড়া পেলাম সেই সন্ধ্যার মুখে, আর দোকান খোলা পাবো না, যা কেনা হয়েছে , হয়েছে..এবার একটা ডাণ্ডার ওপর কাপড়ের পাড় জড়িয়ে জড়িয়ে যখন গদা র মতো কিছু একটা তৈরি হোলো তখন রাত দশ টা, তবু যাহোক হোলো তো !  " ভীম বধ" বলে কত্তা ..!!  আর গদা থাকবেনা সে বাপু কেমন করে হয়, ধম্মে সইবে !!!


পর দিন পুজো, ভোগের পর আমরা মেক আপ নিতে যাবো, প্রদীপকে একটু আগে থেকে পাওয়া যাচ্ছিলো না, বরং ও অনেক আগেই ভোগ খেয়ে নিয়েছে, ভাবলাম জোর বাগে কাছেই ওর বাড়ী হয়তো ড্রেস আনতে গ্যাছে, বিকেল হয়ে আসছিল, এমন সময় কে একজন ফিসফিস করে আমার কানে এসে বলল : ও পল্লব আরও দুজন সিনেমা দেখতে গ্যাছে, আঁতকে উঠে বললাম : ওরা গ্যাছে যাক, তুই প্রদীপ কে বারণ করলিনা ? সে কাচু মাচু মুখে যা বলল তার সারমর্ম এই : ওর ইচ্ছে ছিলো না, বাকি তিনজন জোর করে নিয়ে গ্যাছে, চোটে উঠে বললাম : জোর করে মানে ? আর একজন পাশ থেকে বলল: ও কি কচি ছেলে ? অনেকেই বলল : কী হবে এখন ? ওরই তো মেন রোল ! সেই ছেলেটি বলল : কি করবো ওরা তিনজন বললো ৭ টায় শো আমরা ৬ টা র মধ্যে ফিরবো । একজন ঝাঁঝিয়ে উঠলো : এখন ৬:১০ ! সেই ছেলেটি বে-আক্কেল এর মতো বলে বসলো : ওরা বলল, আহা ! সবাই তোমরা  কাল দেখলে, আমরা দেখবো না ? কথা না বাড়িয়ে নীরেন কে ওর পার্ট মুখস্থ করতে বললাম, তাতে কি হবে ? এসব কথা দাবানলের মতো ছড়ায়, একটু পর প্রিন্সিপাল ডেকে পাঠালেন বাইরে, বেরিয়ে দেখি প্রেক্ষাগৃহ ভরতে শুরু করেছে, অন্য সময় হলে আনন্দ হোত আজ ঘামছি ! প্রিন্সিপাল এক পাশে ডেকে বললেন : এখন কি করবি ? সংক্ষেপে বললাম : নিরেন করবে, উনি তাও আমাকে দু কথা শোনাতে ছাড়লেন না : দেখলি তো, তোদের বন্ধুরাই তোদের ডোবায় !...ওঁর কথায় কোনো উত্তর না দিয়ে মনে মনে প্রদীপ কে গালাগাল দিতে দিতে গ্রিন রুম পৌঁছেই দেখি প্রদীপ বসে জল খাচ্ছে আর হাফাচ্ছে, অন্যরা ওর ড্রেস মেক আপ রেডী করছে, ও বুদ্ধি করে পেছনের গেট দিয়ে ঢুকেছে আর বাকিরা ওকে দেখতে পেতেই সোজা পেছনের দরজা দিয়ে গ্রিন রুম ! বুকের থেকে ১০মনী পাথর নামলো । কে এক বুদ্ধিমান বলে উঠলো : প্রিন্সিপাল কে বলে আসি ও এসে গেছে ? দশটা গলা চেঁচিয়ে উঠলো : মারবো ইয়াক থাপ্পড় !!! মেজাজ একটু কমিয়ে ছেলেটাকে শুধু বললাম, খুব সখ না শো এর আগে গ্রিন রুমএ অশান্তি পাকানোর ? সে চুপসে গেল...প্রদীপ সেদিন ওর জীবনের বেস্ট পার্ট গুলোর একটা এমন ভাবে করলো যে আমি তো খুশি ই উপরন্তু প্রিন্সিপাল আলাদা করে ডেকে ওকে বাহবা দিলেন, তারপর শুধু মৃদু আদরের ভর্ৎসনা মেশানো কণ্ঠে বললেন : বাবারা ! একটু যদি সিরিয়াস হও তোমরা কত কি করতে পার বলতো ?


সেদিনই বোধ হয় সাবালক হয়ে উঠেছিলাম, কিন্তু ভীম কৃষ্ণ দুর্যোধন আর মা সরস্বতীর আড়ালে আর একজন সেদিন অলক্ষ্যে হেসে ছিলেন , তিনি জীবন নাট্যের গুরু স্বয়ং নটরাজ !....বাড়ি ফিরে দেখি সরস্বতী পুজোর সন্ধ্যায় জলসা বসেছে, ততদিনে আমরা আর কে পুরম শিফট করেছিলাম, এক কাপ চা নিজেই বানিয়ে চুমুক দিয়ে বাইরের ঘরে উঁকি মেরে দেখি বিস্তর লোক, আমার কাকীমা গান গাইছেন, উনার গানের গলা সত্যিই মধুর, আমার আর তখন লোকজন ভালো লাগছিল না, এক্ষুনি আবার কেউ আবৃত্তি করতে বলবে ! বারান্দায় ছোটমা ( ছোট কাকীমা ) কে শুধু বললাম : আমি ছাদে যাচ্ছি ছোটমা, এসব হয়ে গেলে মাকে বোল আমি এসে গেছি, ছোটমা বললো : আসরে বসবি না ? ছোট্ট একটা  " নাহ্" বলে ছাদে এলাম, একরাশ তারা আর নিচের তলায় শর্মাজি র বাগানের ফুলের সুবাস এই ছাদ অবধি উঠে আসছে, সবে শুক্ল পক্ষের পঞ্চমী, চাঁদ তেমন বড়ো নয় তথাপি পরিষ্কার আকাশে চন্দ্রকলা দেখার মতো, চা এ চুমুক মেরে একরাশ নিঃশ্বাস নিলাম বুক ভরে, আঃ পৃথিবী টা কি মনোরম... নীচে কাকীমার গলা ভেসে আসছে ....."আলোকে মোর চক্ষু দুটি মুগ্ধ হয়ে উঠলো ফুটি, নীদ গগনে পবন হোলো সৌরভে তে মন্থর, সুন্দর হে সুন্দর"...কি অনাবিল হওয়া ! ...কেউ যেনো উড়িয়ে নিতে চাইছে অন্য এক জগতে...

– ইতি নাট্যাভিনয় তন্ত্রে দ্বিতীয় জনম 






কোনো দার্শনিক তত্ব থেকে বলিনি যে সেদিন জীবন দেবতা অলক্ষ্যে হেসে ছিলেন, কথাটা সত্যি প্রমাণ হোলো ৮ মাসের ভেতরেই, আর সেদিন থেকেই শুরু হোলো আমাদের বাউণ্ডুলে জীবন যাত্রা : তখন ১১ ক্লাস, আর ৫ মাস পরেই বোর্ড, দি মভিয়েরস থিওরেম শেষ করিয়ে স্যার সবে বাইনোমিয়াল বোঝাচ্ছেন, কেউ কিচ্ছু বুঝছিনা, কিন্তু ক্লাস নিস্তব্ধ, অসাবধানে একটা জ্যামিতি বক্স পড়ে গেলে সে ছেলেটা থাপ্পড় খাচ্ছে, এমন সময় জানলা দিয়ে একটা ছোট্ট চিরকুট এসে পড়লো, তাতে লেখা : কাল সকাল ১১, চীনুর বাড়ী, সাক্ষাতে সব বলবো - ইতি শুভ রঞ্জন...ব্যাপারটা বোঝা গেলো না, তবে কাল রবিবার বটে, বেশ, যাবো ।


পর দিন ওর চিলেকোঠা ঘর মশগুল, চা সিগারেট চলছে, সবাই আমরা একই স্কুল এর, কেউ পাশ করে ১ ইয়ার, কেউ হায়ের সেকেন্ডারি দেবে, কেউ ১০ ক্লাস, কি ব্যাপার ? না নাটকের গ্রুপ খোলা হবে, পুজোয় নাটক হবে, একটু পর ১১:৩০-১২ টায় রবিন দা ( যাযাবর গোষ্ঠী ) নাটকের বই নিয়ে, চিনু র কাকা সজলদা উদ্যোক্তা রবীনদা চলে যাবার পর আসল কথাটা হোলো, কলেজ যাদের সমস্যা নেই, ১০ বা ১১ ক্লাস কে বাড়িতে ঢপ মারতে হবে, বিশেষ করে বোর্ড যাদের..মনে আছে  "একটু ঘুরে আসি" বলে নাহয় ৮-১০ বাড়ি থেকে উধাও, আর তা না হলে এক্সট্রা ক্লাস বা প্র্যাক্টিকালের নাম করে দেরী করে ঢোকা, আর পড়ার বইএর আলমারিতে নাটকের বই লুকিয়ে রেখে, ছাদে গিয়ে পার্ট মুখস্থ..


৪৬ বছর আগে,  ১৯৭৪ এর অক্টোবর মাস, বোর্ড আর ৪ মাস লুকিয়ে নাটক করছি প্রাক্টিকাল ক্লাসের নামে, বাবারা জানলে পিঠের ছাল ছাড়ানো হবে, সপ্তমী নবমী দুটো শো পাওয়া যাবে ৫০+৫০=১০০ টাকা, পুজোর পর যা বাঁচবে তাই দিয়ে মাংসের ঘুগনি, এটা আর মাথায় নেই যে লোধি রোড চেনা জায়গা, একগাদা দিদিমণি ওখানেই থাকেন আর সফদরজঙ্গ এনক্লেভও তাই, যেকোনো মুহূর্তে জানাজানি হবে, আসলে আমাদের মনোভাব : সে দেখা যাবে, তদ্দিনে শো শেষ, মনে আছে পরে জানতে পেরে বাবা রেগে বলেছিল : লেখা পড়ার নাম নেই ওদিকে  ক্লাব করা হচ্ছে  " ভিমরুলের চাক " না কি যেন ! আসলে বাবা  "মৌচাক" নামটা গুলিয়ে ছিলো, এদিকে নিজে কিন্তু যাত্রা করে বেড়াচ্ছে, পুজো থেকে কালীপূজো ছ টা শো, সেসব দেখতে পুরো দিল্লি ঝেঁটিয়ে, এমনকি আমাদের স্কুলের একগাদা দিদি আর স্যার !


পুজোর পর বাবা কোনো কারণে স্কুল এলে প্রিন্সিপাল নিজের রুম এ চা খাওয়াতেন বাবা আর নিরেনের বাবাকে, উনি কোনো কমপ্লেইন করতেন না, বাবারা আমাদের গুণাবলী সব ফাঁস করে আসতেন চা খেতে খেতে আর সঙ্গে কত অভিনয়ের গপ্পো, পরের বছর পুজোর ছুটির ঠিক আগে আগে দিদিমণি মাস্টার মশাইরা ফার্স্ট টার্ম এর খাতা দেখিয়েই অন্য গপ্পো : পুজোয় কার কত জামা হলো, এবারে কেউ কলকাতা যাচ্ছে কি না পুজোর আগে করিডোর এ কোনো স্যার ডাকলেন : শোন ! বুক কেঁপে উঠলো, এই রে ! কোনো অপরাধ ধরা পড়লো নাকি ? জিজ্ঞেস করলেন : এবার পুজোয় কোন যাত্রা রে ? কোথায় কোথায় হবে ? (অর্থাৎ সব থেকে কাছের প্যান্ডেল এ উনি যাবেন, সেটাও হয়তো ৪-৫ কিমি, আর ভোর রাতে গায়ে শাল জড়িয়ে দল বেঁধে ফিরবেন)....যাক ! বাঁচলাম ! অপরাধ করিনি তারমানে, শুরু হোলো যেটুকু জানি তার ব্যাখ্যা মনে আছে স্কুল - গেট এ চানাচুর হেঁকে যেত, অদ্ভুত তার ফেরি করার ধরন : ফটাফট আজা...ফটাফট আজা...নেতাজী নগর থাকতে ৪ পয়সায় বাবার চারমিনারের প্যাকেট, কাকুর কাঁচি সিগারেট, এক আনায় তরকা দেওয়া ডাল দু পয়সার তন্দুরী, করি এক বাটি ৩ পয়সা, এ ছাড়া বিনয়নগরেও দেখেছি ভালুক খেলা, কাচের বাক্সে মুখ ঢুকিয়ে ছবিদেখা, তাম্বার পয়সা, ফুটো পয়সা আরো কতো কি যে ! আর সকাল বেলা হাঁক পারতো : ডবল রটি মক্ষণ্ডে.. ( মাখন ও ডিম ), কিন্তু আর পেছনে নয় এবার একটু সামনে এগোই.....


সেসময় উৎপলবাবু ছাড়া আমার মনে গভীর প্রভাব ফেলেন অজিতেশ ব্যানার্জী, ভালো মানুষ, তিন পয়সার পালা, ওহ্ কি সব বই, চেতনার জগন্নাথও খুব ভালো লেগেছিল, দিল্লিতে যাত্রার জগতে ফনি কাকা রবি কাকা তিমির দত্ত তো ছিলেনই, শুভেন্দু লাহিড়ী, যতীন দাস, আশিস মজুমদার ও ভোলার নন, ছবি সেনের বন্দরের কাল মনে আছে, আর কাজল পিসির মহারানী ঊর্মিলা, এদিকে ততদিনে দিল্লিতে এক ঝাঁক তরুণ প্রতিভার আবির্ভাব ঘটেছে রাইফেল যাত্রার মাধ্যমে, জয়ন্ত দাস, শামু গাঙ্গুলি, উৎপল দা, শক্তি দা, এখানে জয়ন্ত দার উল্লেখটা আলাদা আরো দু একবার করবো অন্য কারণে, কাকা যেহেতু অভিনয় করতেন এদের সঙ্গে তাই এদের সবার বাড়িতে যাতায়াত ছিল, মনে আছে, টিন এজ কাটিয়েও মনে হোত, যেন স্বপ্নের রাজকুমার সব বাড়িতে যাতায়াত করছে, আর কি সব যাত্রা ! রাইফেল, জালিয়ানওআলা বাগ, সোনাই দিঘী, বাঙালী, সমুদ্র শাসন, সিপাহী বিদ্রোহ...বাবার এন্ট্রি হয়  "জলিয়ান" থেকে, রাইফেল এ শক্তি দার মাঝে মাঝেই টিন বার করে : সিগারেট খাবেন ? উৎপল দার যুগল চৌধুরী র ভূমিকায় ভুলভাল ইংরেজি : আই ওয়ান্ট এড টু ল্যাং হিম স্যার ! কিম্বা : বাবা বীরেন ! তুমি আমার মুখ রেখেছ বাবা ! ইউ হ্যাভ কেপট মায় ফেস ! সুবিমল জেঠুর রহমত শেখ, কিন্তু আমায় সবথেকে প্রভাবিত করেছিল শামুদার উদাত্ত কণ্ঠ : পালিত মায়ের সঙ্গে লুকিয়ে দেখা করতে এসেছে বিপ্লবী অবিনাশ বোস, বলছে : মহারানী লক্ষীবাই আজও জীবিত তো ! ঝাঁসি আজও অজেও তো ! ( বলেই মাকে প্রণাম করে বুকে জড়িয়ে ) কেমন আছো মা গো ! ( ওই মা গো ডাক এ পর্যন্ত আর কোথাও শুনলাম না ) আর শেষ দৃশ্যে যখন ধরা পড়ে যাচ্ছে পুলিশের হাতে, তখন সেই উদার আবৃত্তি মা এর উদ্দেশে : মহারানী ! আমি চলিলাম, যেথা নাহি নাম, যেথায় পেয়েছে লয়, সকল বিশেষ পরিচয়.....!!


দুটি লোকের ফ্যান হয়ে পড়লাম, "বাবু" তে উৎপলদা আর "জেঠা মশাই " তে জয়ন্তদার, সে সময় শনি চক্রের "শের আফগান" রমরম করে চলছে, অনেক বলার পর বাবা গ্রিন রুম এ নিয়ে গিয়ে জয়ন্তদা কে বললেন : জয়ন্ত আমার পুত্রটি যে তোমার অভিনয় এর অনুকরণ করতে চায় সেটা বুঝছি, আমি আর কানু ওর কাছে কিচ্ছু নই...মৃদু হেসে দুএকটা কথা বললো দাদা, তাতেই ধন্য হয়ে গেলাম ( মেক আপ নেবার পর ওরা কেউ কথা বলত না, অমর কাকার ( অমর হোর ) হুকুম ছিল, এরপর ক্যাপ্টেন হুররা, বৃষ্টি বৃষ্টি, ছয়ানট, কি নয়, আমার আইডল ততদিনে স্থির করে ফেলেছি...


এদিকে শৈলেশ গুহ নিয়োগী, কিরণ মৈত্র, রাধারমণ ঘোষের পর আমরাও অজিতেশ, উৎপল দত্ত, মোহিত চ্যাটার্জি, বাদল সরকারের বই করতে শুরু করলাম, মোহিতের লেখার ওপর আমাদের সকলেরই টান ছিল, কারণটা অন্য নাট্য কালের বই গুলো অদ্ভুত আধুনিক হতো, জগদীশ বাবুর বই ও পুতুল কাকার (পুতুল নাগ) এর ভুষণ্ডির মাঠে আর অজয় কাকার তুঘলক রীতিমত নাড়িয়ে দিয়েছিল সবাইকে তড়িৎ আর দীপঙ্কর যাযাবর এ নিয়মিত অভিনয় করতো, নবোদয় গোষ্ঠী ছাড়া এই একটি গ্রুপ যার নাটক খুব ভালো লাগত, শক্তিদা অন্য রকম পরিচালক, শিক্ষায় ও আর শামুদা তৎকালীন আধুনিক দের রিপ্রেজেন্ট করত কিন্তু, রবীন দার বই তে একটা অদ্ভুত মিষ্টি ফ্লেভর থাকতো, যেটা ওর ডিরেকশনের নিজস্বতার পরিচয়, সব থেকে মনে আছে "পদ্য গদ্য প্রবন্ধ " যাযাবর, যুবসংঘ, লোধিরোড বেঙ্গলি ক্লাব, কাল চক্র, আমরা এরকম সাত আট টা গ্রুপের আড্ডা ছিল আগরওয়াল রেস্টুরেন্ট এ, যাযাবর’এর বিজয়া সম্মিলনীর প্রধান আকর্ষণ ছিল খাওয়া দাওয়া, কোনো সময় রবিনদা আমাদের দু একজনকে টানবার চেষ্টা করে, সজল দার কথায় নিবৃত্ত হয়, কারণ সজলদার বরাবরই ইচ্ছে ছিল আমরা নিজেদের মতো করে নিজেদের আবিষ্কার করি ।  সেদিন কথা প্রসঙ্গে তড়িৎ বললো আমি চাইতাম না তুই আসিস, জিজ্ঞেস করলাম কেনো, বললো দীপঙ্কর কে বলেও ছিলাম মনের কথা, সুন্দর চেহারা আর মিষ্টি গলার সুবাদে ওই ব্যাটা সব হিরোর রোল নিয়ে যেতো, তার ওপর তুই এলে...খুব হাসি আজকাল সেসব ভেবে, আর দুঃখও হয়, ঈশ ! ঈর্ষণীয় অভিনয় দক্ষতার অধিকারী তড়িৎ মিত্র গোপনে আমায় ঈর্ষা করতো ! এটা তখন যদি জানতাম, আমার কনফিডেন্স চতুরগুণ হয়ে যেত...আরো একটা মজার কথা জানলাম ওর কাছে, যেটা আগে জানতাম না । তড়িৎ নাকি ক্লাস ফাইভ এ শেফালী দিদিমণি কে অবাক হয়ে দেখতো আর ভাবতো : আহারে ! সম্রাটের মা একটা সাধারণ কাপড় পরে আমাদের সামাজিক বিজ্ঞান পড়াচ্ছেন !! ...আসলে ও শেফালী দিদিমণি কে "চন্দ্রগুপ্ত" নাটকে চন্দ্রগুপ্তের মা মুরা র রোল এ অভিনয় করতে দেখেছিল...আর একজন অসাধারণ অভিনেতা ছিল দিলীপদা, যাযাবর’এর দিলীপ ঘোষ । আমার ধারণা ছিল বাবা অভিনয় এ আসেন ৫২-৫৩, কিন্তু সেদিন জানলাম ৪৬ এ আঠারো বছর বয়সে প্রথম সিরাজ, তারপর টিপু সুলতান এ প্রথমে করিম শাহ পরে টিপু, সুবিমল জেঠুর মসিয়ে লালী নাকি দেখবার মত ছিল, আর ছিলেন সরোজ মুস্তফী , উনি বলতেন : ক্যালেন্ডার এ ধেঁড়া কেটে আমার কাছে আসবেনা, যেদিন বুঝবো বই তৈরি সেদিন মাচা বাঁধতে বলবো কিম্বা হল বুক করবে । 



জ্যোতিরিন্দ্র কাকুর অভিনয় মনে আছে, ক্যাপ্টেন হূররা তে সম্ভবত প্রথম তাপসদা আর বাদলদাকে দেখি, পরে তাপসদা কে একজন অবসরপ্রাপ্ত বৃদ্ধ আর্মি ম্যান’এর রোল এও দেখি ( বই এর নাম আজ আর মনে নেই ) আর বাদলদাকে দেখি চলচ্চিত্র চঞ্চরী তে ভবদুলাল’এর রোল এ, ক্যাপ্টেন হুররায় জয়ন্তদা অনবদ্য : জাহাজের ডেকে দাঁড়িয়ে একটা ছোট মে যখন খিদের জ্বালায় দুফোঁটা চোখের জল ফেলেছিল, তখন সে জলের ওজন কত আমি তো মাপতে পারিনি ! না, আমি সব পারিনা !!... গুগলু ! পাখিগুলো কথা বলছে না কেনো ?....যেমন গলার কাজ, তেমনই শক্তিদার ডিরেকশন, তেমনই নবোদয়’এর প্রোডাকশন আর তেমনি বলিষ্ঠ স্ক্রিপ্ট মোহিত চট্টোপাধ্যাযয়ের, তবে বৃষ্টি বৃষ্টি তে আমার জয়ন্তদার থেকেও শিপ্রাদিকে বেশী ভালো লেগেছিল, মেয়েটির মনের কমপ্লেক্স দূর করে জাদুকর প্রস্থান করলো..বাইরে ভাই ডাকছে  " ও দিদি ! দেখে যা ! বৃষ্টি পড়ছে "...এদিকে মেয়েটির মনের ঘরে সব আগল সরে গিয়ে ঘরের ভেতরেই যেনো বর্ষা নেমেছে, তাইতে সে স্নান করছে ( মাইম এ ) আর মুখে বলছে : বৃষ্টি পড়ছে রে সমু ! ঝম ঝম করে বৃষ্টি পড়ছে...বৃষ্টি বৃষ্টি !....যেন  " তোমার এই ঝর্না তলার নির্জনে, মাটির এই কলস আমার ছাপিয়ে গেলো কোনখানে...

– ইতি নাট্যাভিনয় তন্ত্রে তৃতীয় জনম 


ক্রমশঃ ( আগামী সংখ্যায় )...


No comments

FACEBOOK COMMENT