DEHLIJ

অরূপ বন্দ্যোপাধ্যায়

 রক্তে রাঙা তারাই



হিন্দুস্তানেও এখন জাঁকিয়ে শীত পড়েছে। তবে কাবুলের চাইতে অনেক কম। সরস্বতী নদী থেকে উঠে আশা শনশন হাওয়া যেন শিবিরের ভিতরেও সব উড়িয়ে নিয়ে যাবে। নদীর ধারে এই সৈন্যশিবির পাতা হয়েছে এক সপ্তাহের উপরে। সুদূর গজনী থেকে অভিযানে এসেছে সুলতানি সেনা। সুলতান শিহাবুদ্দিন বিচলিত মুখে একা তাঁর শিবিরে পায়চারী করছেন। সাদামাটা শিবিরের ভিতর মশাল জ্বলছে। মশালের আলোয় সুলতানের বহুমূল্য পোশাক ঝলমল করে উঠছে। তবে আলোর সেই ঝলকানি দেখার মতো কেউ উপস্থিত নেই সুলতানের বিশ্রামকক্ষে। সুলতান গভীর নিদ্রায় মগ্ন ভেবে তাঁর কক্ষের বাইরে প্রহরীও নড়াচড়া করার সাহস পাচ্ছে না, পাছে শব্দ হয়। সরস্বতীর বয়ে চলার ছলছল শব্দ রাতের নিস্তব্ধতা মাঝে মাঝে বিচ্ছিন্ন করছে। আসন্ন যুদ্ধের পরিবেশে যেন সুলতানি আস্তাবলে তেজী আরবি ঘোড়ার পাল আজ পা ঠুকতেও ভুলে গিয়েছে। 

হিন্দুস্তানে সুলতান শিহাবুদ্দিনের এই হানা দ্বিতীয়বার। গতবারের হার মেনে নেওয়া এই দুর্ধর্ষ যোদ্ধার পক্ষে মেনে নেওয়া সহজ ছিল না। এই তারাই -এর মাটিতেই গতবছর রাজপুতদের সাথে ভীষণ যুদ্ধে পরাজিত, অপমানিত হয়ে পালিয়ে যেতে হয়েছিল সুলতানকে গজনীর দুর্গে। জানটা বেঁচে গিয়েছিল, এটাই বড় কথা। তবে হ্যাঁ, হিন্দুস্তানের যোদ্ধাদের ছোট করে দেখার ভুল এবার আর করা যাবে না। লোকগুলো লড়তে জানে বটে! সুলতানের তুর্কী রক্ত আবার ছলাত করে একেবারে মাথায় উঠে বসে। যার ভয়ে গোটা আফগান আর তুর্কীস্তান কেঁপেছে, খুব সহজে বশ্যতা স্বীকার করেছে একের পর এক যুদ্ধবাজ সেনাধিনায়ক, তাকেই কিনা হার মানতে হল হিন্দুস্তানের মাটিতে! রাজপুত রাজাদের শৌর্য সম্পর্কে সম্যক ধারণা সুলতান শিহাবুদ্দিনকে কেউই দিতে পারেনি। অথচ অভিজ্ঞ সেনাপতির কোনও অভাব ছিল না তাঁর সৈন্যদলে। 

গতবছর রাই পিথোরার বিপুল সেনাবাহিনী এক ঝটিকা আক্রমণে ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছিল তুর্কী সেনানী। যুদ্ধের আচমকা ধাক্কা সামলাতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছিল শিহাবুদ্দিনের প্রায় সব সমরাধিনায়কের দল। অথচ মোটা মাইনের চাকরি করেছে তারা সুলতানের অধীনে। বুরবকদের শাস্তি দিয়েছিলেন সুলতান। তবে তাঁর প্রখর প্রশাসনিক দক্ষতা আবার একবার হিন্দুস্তানের মাটিতে নতুন করে ভাগ্য গড়ে নেবার সুযোগ দিয়েছে হেরে যাওয়া সেনাদ্ধক্ষদের। রাই পিথোরা নিজেকে পৃথ্বীরাজ বলে পরিচয় দেয়! সে নাকি সসাগরা পৃথিবীর অধীশ্বর হতে চায়! 

শয়ন কক্ষে পদচারনা করতে করতে সুলতান শিহাবুদ্দিনের ঠোঁটের কোনায় এক আশ্চর্য তির্যক হাসির বিদ্যুৎ খেলে যায়। সসাগরা পৃথিবীর অধীশ্বর হতে কোন সুলতানই না চায়! শিহাবুদ্দিন নিজেই তাঁর নাম রেখেছেন মহম্মদ-বিন-স্যাম। শিহাবুদ্দিন মানে তো বলশালী! সুলতান বলশালী তো অবশ্যই। কিন্তু তিনি চান, পয়গম্বর মহম্মদের মতোই তাঁর নাম ছড়িয়ে পড়ুক পৃথিবীর কোণায় কোণায়। ঘরময় পায়চারী করে বেড়ান সুলতান মহম্মদ ঘুরি— হিমালয়ের অপর পাড়ে, ঘুর প্রদেশের শক্তিশালী সম্রাট। 

আর একজনের চোখেও আজ ঘুম নেই। বিছানায় শুয়ে রয়েছে সে, কিন্তু চোখ দুটো খোলা আছে অন্ধকারে। যুদ্ধের প্রস্তুতি মোটামুটি সমাপ্ত। তবু যেন কোথাও আবার দাবার ছকের মতো শেষ বারের মতো চোখ বুলিয়ে নেওয়া। ভুল হলেই পরাজয়, নয়তো মৃত্যু। কিন্তু সুলতান শিহাবুদ্দিনের কথাগুলো মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। হিন্দুস্তানে পাকাপাকি বাস করার কথা সুলতানের মাথায় একেবারেই নেই, সেটা জানা আছে এই তুখোড় সেনানায়কের। সে হল কুতুবুদ্দিন আইবক। স্রেফ পেশীর জোরেই নয়, সামরিক দক্ষতায় তাবড় তাবড় আফগান আর ঘুরের সেনাপতিদের পিছনে ফেলে, সুলতানের বিশ্বাসভাজন হয়ে উঠতে কম পরিশ্রম করতে হয়নি তাকে। প্রতিটি পদক্ষেপ মেপে চলা, অপরপক্ষের চালের আগেই সেই চাল বুঝে নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ মেপে ফেলা, এই তো রাজনৈতিক জীবন। 

কুতুবুদ্দিনের তিন কুলে কেউ নেই। সুলতানের নেই কোনও অওলাদ। তাই কি সুলতান সন্তান স্নেহ দিয়ে সামান্য এক দাসকে নিজের ডান দিকটা ছেড়ে দিয়েছেন? তাই কী তিনি এবার হিন্দুস্তান অভিযানে কুতুবকে সঙ্গী হবার আদেশ দিয়ে বলেছিলেন, “যদি হিন্দ বিজয়ী হই, তবে সেখানে রাজত্ব করবার দায় কিন্তু তোমার! তুমিই আমার হয়ে শাসন চালাবে গোটা হিন্দুস্তানে”?

কুতুব সেদিন সুলতানের কথা শুনে মাথা নিচু করে জবাব দিয়েছিল, “মহামান্য সুলতান, আপনি ছাড়া আমার অস্তিত্ব নেই। আমি আপনার অনুগৃহীত একজন দাস মাত্র। তবে শুনেছি হিন্দুস্তান অনেক বড়। একদিকে যেমন পাহাড়, আর অপর প্রান্তে তার সমুদ্র...।”

সুলতান শিহাবুদ্দিন মৃদু হেসে কুতুবকে বাধা দিয়ে বলেছিলেন, “হিন্দুস্তানে অনেক টুকরো টুকরো রাজ্য। সবাই যার যার ছোট্ট গণ্ডীতে রাজা হয়ে বসে। হিন্দুস্তান বলতে আমাদের কাছে আজমেঢ় আর দেহলী। একবার দখল করতে পারলে প্রচুর সম্পদ। এই দুটো জায়গা হচ্ছে হিন্দুস্তানের কলিজা। ফতেহ্‌ করে এক এক করে অন্য রাজ্য কেড়ে নিতে শুরু করবে। হিন্দুস্তান মানেই হীরে-জহরত। গঙ্গা যমুনার জলের প্রভাবে সেখানকার জমিন খুব উর্বর। আফগানিস্তান বা ঘুরের মতো রুক্ষ জায়গা নয় সেটা। যত ফসল, তত সম্পদ। যত সম্পদ, তত ক্ষমতা। একবার যদি রাই পিথোরাকে আমরা হারাতে পারি, জানবে গোটা হিন্দুস্তান আমাদের হাতে। গুজরাত থেকে কনৌজ, কোথাও রাই পিথোরার মতো যোদ্ধা পাবে না। একবার তাকে হারাতে পারলে বাকি রাজারা সুড়সুড় করে আমাদের পায়ের তলায় গড়াগড়ি খাবে।”

সুলতানের চোখ রাই পিথোরাকে স্মরণ করে ধকধক করে জ্বলে উঠেছিল। কুতুবুদ্দিন গতবছর সুলতানের সঙ্গী ছিল না। তবে সচক্ষে দেখেছে তারাই-এর সেই যুদ্ধের পর পরাজিত, আপমানিত সুলতানের রুদ্রমূর্তি কীভাবে প্রতক্ষ করেছিল ঘজনির মানুষ। সুলতানের হুকুমে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে সুলতানকে ছেড়ে, বিনাযুদ্ধে, পৃথ্বীরাজের ভয়ে পালিয়ে আসা আমীরদের প্রকাশ্য রাজপথে ঘোরানো হয়েছিল। তাদের গলায় বাঁধা ছিল বজরার থলে। থলে থেকে মুঠো করে বাজরা খেতে খেতে হাঁটতে হয়েছিল তাদের। জনপথের দুপাশে তামাশা দেখতে আসা জনস্রোত হাতে তালি দিয়েছিল, টিটকিরি দিয়েছিল আমীরদের। গরিবদের গায়ের জ্বালা সেদিন মিটেছিল ধনীদের হেনস্থা হতে দেখে। সুলতান শিহাবুদ্দিনের জয়ধ্বনি দিয়েছিল তারা। 



সরস্বতী নদীর জলের বুক চিরে সূর্যদেব লাফিয়ে উঠলেন। খুব ভোরে ওঠা বিক্রমজিতের বহু পুরনো অভ্যেস। আজও তার ব্যতিক্রম হল না। নদীর কনকনে জলে দাঁড়িয়ে সূর্য প্রনাম সেরে নিল বিক্রমজিত। সূর্যের সাথে তার কোনও শত্রুতা নেই। বরং সূর্যের রশ্মি তার শরীরে পেশীর ঢেউ নামিয়েছে। এই জল আর মাটি তাকে করে তুলেছে এক সাহসী যুবক। তবে পরম আদরের সমাজটা যে কয়েক বছর আগে নিজের কাছে শত্রু হয়ে দেখা দেবে, এটা তার কল্পনাতীত ছিল। 

বিক্রমজিতেরা কী জাত, তার জানা ছিল নেই। অসুখে বাপ-মা মারা যাবার পর বিক্রমজিত ঠাকুরদার কাছে মানুষ হয়েছিল। ঠাকুরদা ছিল এক দক্ষ কামার, যাদের স্থানীয় মানুষেরা বলত লোহার। লোহা কেটে, হাপরে পুড়িয়ে, নানারকম তলোয়ার বানাতে তার জুড়ি ছিল না বিক্রমগড়ে। তাদের গাঁয়ের একপ্রান্তে মুষ্টিমেয় কয়েকজনের বসত ছিল, যারা সবাই ছিল লোহার সম্প্রদায়ের। সেইখানে থাকত বিক্রমজিত আর তার ঠাকুরদা। যুদ্ধে ব্যবহার করা অস্ত্রশস্ত্র - বল্লম, তরোয়াল, তির- ধনুক বানাত সে। 

বিক্রমজিত তার ঠাকুরদার কাছে অস্ত্র বানাবার শিক্ষা পেয়েছিল ভালই। ঠাকুরদার কত বয়স হয়েছিল, তার জানা নেই। তবে সে চোখে ভাল দেখত না। হাপরে টান দিতে দিতে হাঁফাত। বিক্রম বলত, “দাদা, এবার তুমি কাজ ছাড়। আমি চালিয়ে নেব দিব্যি। এখন তো বড় হয়েছি।”

ঠাকুরদা জবাবে বলেছিল, “প্রতিবছর তুর্কীদের আক্রমণ বেড়েই চলেছে। আগে এত যুদ্ধ ছিল না, শান্তি ছিল। এত অস্ত্রের চাহিদা ছিল না। এখন রাজপুতদের অনেক অনেক অস্ত্র লাগে। হাত থামলে চলবে কী করে! এ বড় পুণ্যের কাজ হে! একা হাতে তুমি সামলাতে পারবে না। আর যতদিন এই হাত দুখানা চলে, ততদিনই বুকের খাঁচার ভিতর এই কলজেটা ধক ধক করে চলবে।”

তারপর বিক্রমগড়ে তুর্কী সওয়ার এল। গাঁয়ে রোজই খবর আসে তুর্কীদের লুঠপাটের নানা গল্প। মানুষ ঘর থেকে বাইরে পা রাখতে ভয় পায়। বিক্রমগড়ের কেল্লা নাকি তুর্কীরা অধিকার করে বসেছে। চহমান রাজপরিবার যুদ্ধে পিছু হটে গিয়ে কেল্লার অধিকার তুর্কীদের হাতে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছে। এসব খবর কানাঘুষোয় শুনতে পায় বিক্রমজিত। তার যুবক শরীর যুদ্ধের গরম খবরে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। 

একদিন দুপুর নাগাদ বিক্রমজিতের একটু ঝিমুনি ধরেছিল। সকাল থেকে হাপর টেনে টেনে হাত দুটো ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল। হটাত ঘোড়ার ক্ষুরের আওয়াজে তন্দ্রা ভেঙে গেল বিক্রমজিতের। ধড়মড় করে উঠে চোখ মেলে সে দেখে, উঠোনে চার চারজন ঘোড়সওয়ার দাঁড়িয়ে। প্রাথমিক ভয় কেটে যাওয়ার পর দেখা গেল, তিনজন আফগান সৈনিক আর একজন এ দেশিয় মানুষ ঘোড়ায় চড়ে তাদের কুঁড়েঘরের চারিদিক জরীপ করছে। বিক্রমজিতকে ভ্যাবাচাকা খেয়ে যেতে শোনে আফগান সৈনিকরা তাদের দেশিয় ভাষায় কিছু আলোচনা করছে, যার একবর্ণ বিক্রমজিতের মাথায় ঢোকে না। ভারতীয় মানুষটা ঘোড়া থেকে নেমে এসে বিক্রমিজিতকে ভরসা দিয়ে বলে, “ঘাবড়ে যেও না ছোকরা। তোমার ঠাকুরদাকে ডেকে দাও। এরা তুর্কী সেনাদলে ভাল একজন অস্ত্র বানাবার কারিগর খুঁজছে। তোমার ঠাকুরদা তলোয়ার বানাবার ওস্তাদ, সে খবর আমাদের সেনাপতির কানেও পৌঁছেছে।”

ঠাকুরদা বিচক্ষন ব্যাক্তি। সৈনিকদের সাথে কথা বলে সে তাদের বুঝিয়ে দেয় যে, রাজপুতদের তরবারি সরবরাহ করার বহুদিনের কারবার ছেড়ে সে তুর্কীদের কাজ নিলে না, খেয়ে মরতে হবে দাদু নাতিকে। তুর্কীরা তো আর বরাবরের জন্য এ দেশে থাকবে না। তবে তারা যদি মনে করে, বিক্রমজিতকে কাজ দিতে পারে। ওর এখন তরুণ বয়স। সে ঠাকুরদার তালিম পেয়ে একজন দক্ষ কারিগর হয়ে উঠেছে। সামনে তার ভবিষ্যৎ আছে। 

ঠাকুরদাকে ছেড়ে তুর্কী শিবিরে যেতে খুব কষ্ট হয়েছিল বিক্রমজিতের। তবু গিয়েছিল ভাগ্য পরিবর্তনের উদ্দেশ্যে। তারপর এল গ্রীষ্মকাল। এদেশ থেকে লুঠপাট করে তুর্কীদের ঘরে ফেরার সময় এসে গেল। বিক্রমজিত একদিন জানতে পারল ওরা শিবির গোটাচ্ছে। বিক্রমজিতের কারিগরি দক্ষতায় তুর্কী সেনানায়ক খুশি হয়ে ওকে তাদের দেশে নিয়ে যেতে চেয়েছিল। কিন্তু দেশের মাটি আর জলে বেড়ে ওঠা বিক্রমজিত বিদেশে ভাগ্য নির্ণয় করবার সাহস পেল না। গাঁয়ে ফিরে এল বিক্রমজিত। শুরু হল তার জীবনের নির্মম এক অধ্যায়। 



সারারাত অনিদ্রায় থাকার কারণে সুলতান শিহাবুদ্দিন ভোর রাতের দিকে ঘুমোতে গিয়েছিলেন। স্বপ্নে দেখলেন দিল্লির সিংহাসনে তিনি বসে। পৃথ্বীরাজকে তাঁর সামনে বেঁধে আনা হয়েছে। পরাক্রান্ত রাজপুত রাজা সুলতানের সামনে ভয়ে থরথর করে কাঁপছে। দেহলির কেল্লা থেকে উদ্ধার হয়েছে প্রচুর সোনাদানা। চারিদিকে স্তূপাকৃতি হীরে-জহরত থেকে ঠিকরে পড়ে আলোয় আলো হয়ে উঠেছে সুলতানের দরবার। সুলতানের নির্দেশে হাতের বাঁধন খুলে দেওয়া হল রায় পিথোরার। সুলতান তাকে কাছে ডাকলেন। আর ঠিক তখুনি কটিবন্ধ থেকে ছুরি বার করে সমূলে সুলতানের বুকে বসিয়ে দিল দুর্বিনীত রাজপুত রাজা। 

দুঃস্বপ্নে ঘুম ভেঙে যায় সুলতান শিহাবুদ্দিনের। এত শীতেও তাঁর গা দিয়ে নেমেছে স্বেদ স্রোত। প্রথমে চোখ মেলে নিজেকে জীবিত দেখে আস্বস্ত হন সুলতান। ওহ, তবে সবটাই স্বপ্ন ছিল! কিন্তু উত্তেজনায় তাঁর কলিজা এখনো লাফাচ্ছে যে। 

সুলতানের ঘুম ভেঙেছে জানতে পেরে খাস ভৃত্য এসে হাত-মুখ ধোয়ার জলের পাত্র এনে হাজির করল সুলতানের শয়নকক্ষে। এবার সুলতান নামাজ পড়বেন। বাইরে দূরে আস্তাবলে সহিসদের চিৎকার ভেসে আসছে। সুলতানের জন্য নানাবিধ পাকোয়ান তৈরি করছে তাঁর খাস খানসামারা। আলাদা ব্যবস্থা আমীর আর সেনাপতিদের জন্য। সাধারণ সৈনিকদের জন্য একেবারে সাদামাটা খাবার তৈরি হচ্ছে সেনাশিবিরের বাইরে। 

নামাজ পড়ে, নাস্তা হয়ে যাওয়ার পর, সুলতান তাঁর শয়নকক্ষের বাইরে মন্ত্রণা করতে বসলেন আমীর ও সেনাপতিদের সাথে। কুতুবুদ্দিন তাঁর ডান দিকে একটু তফাতে বসে। সুলতানের কপালের গভীর ভাঁজে নানা অভিব্যক্তি খেলে যাচ্ছে। আসন্ন যুদ্ধের ছক নিয়ে সেনাপতিদের সাথে দ্রুত আলোচনা সেরে নিলেন সুলতান। জানা গেল সরস্বতী নদীর অপর পাড়ে, ঠিক তুর্কী সেনাছাউনির উল্টো দিশায়, শিবির পেতেছে পৃথ্বীরাজ স্বয়ং। 

এই সেই তারাই প্রান্তর, যেখানে গতবছর পৃথ্বীরাজের ভাই, দেহলির সম্রাট গোবিন্দ রাইয়ের হাতে শোচনীয় পরাজয় হয়েছিল ঘুর অধিপতি শিহাবুদ্দিনের। সংখ্যায় তুর্কী সেনাদের চাইতে রাজপুতেরা প্রায় দ্বিগুণ। ওদের কাছে আছে হাজারেরও বেশি হাতি, যাদের দেখলে তেজিয়ান ঘোড়ারাও ভয় পেয়ে চঞ্চল হয়ে ওঠে। তখন ঘোড়সওয়ারদের ঘোড়ার পিঠে বসে থাকা মুশকিল হয়ে যায়। তবে তুর্কী তিরন্দাজদের খিপ্রতা আর পারদর্শিতা কাজে লাগাতে পারলেই যুদ্ধে জয় অনিবার্য। তাই নিজের সেনাদলকে পাঁচটা ভাগে বিভক্ত করে দিয়ে  যুদ্ধের ছক জানালেন সুলতান।

“চার দিশায় যাবে চারটে দল। ঝটিকা আক্রমণ করে এক লহমায় পর্যুদস্ত না করতে পারলে আবার আমাদের পরাজয় নিশ্চিত। পৃথ্বীরাজের সেনাদের ডান, বাঁ, সামনে আর পিছনে একযোগে ঘিরে ধরে আক্রমণ করতে হবে। হাতির আক্রমণ থেকে বাঁচতে পিছিয়ে পড়ার ভান করতে হবে কৌশলে। তাতে দুটো লাভ হবে, ঘোড়াকে হাতির সামনে থেকে সরিয়ে নিয়ে গেলে তাদের ভয় কমে যাবে আর রাজপুতেরা ভাববে আমরা রণে ভঙ্গ দিয়ে পালাচ্ছি। তারা অসতর্ক হবে। সেই মুহূর্তে আবার ঝটিকা আক্রমণ করে পর্যুদস্ত করতে হবে শত্রুপক্ষকে। পাঁচ নম্বর দলটি থাকবে অনেক দূরে। সেখানে শুধু রসদ থাকবে না, থাকবে দশহাজার ক্ষিপ্র ঘোড়সওয়ার, যারা প্রয়োজনে রাজপুত সেনাবাহিনীর উপর বজ্রাঘাত করতে পারবে। কথা হচ্ছে, কখন শুরু হবে যুদ্ধ! প্রত্যেক সেনাকে যুদ্ধের নীতি যেন ভাল করে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। উপযুক্ত সময় এলেই যুদ্ধের ইশারা করা হবে। সব সেনা যেন সদা প্রস্তুত থাকে।”

সেনাপতিরা চলে যাবার পরই কুতুবুদ্দিন সুলতানের কাছে মৃদুস্বরে কিছু আর্জি করল। সুলতানের কপালে ভাঁজ। ঘাড় নেড়ে কুতুবের কথায় সম্মতি জানাতেই কুতুব প্রহরীকে নির্দেশ দিয়ে বলে, “বিক্রমজিতকে সুলতানের সামনে হাজির কর।”

বিক্রমজিত সুলতানকে কুর্নিশ করে প্রসারিত বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়ায়। তবে তাঁর দৃষ্টি অবনত। সুলতান শিহাবুদ্দিন তাকে অভয় দিয়ে বলেন, “তোমার পরিচয় দাও হিন্দুস্তানের যুবক।”

বিক্রমজিত বলে, “আমি তুর্কী অস্ত্রাগারের সামান্য একজন কর্মী মাত্র জনাব। আমার গ্রাম বিক্রমগড়ে। এই হিন্দুস্তানের মাটিতে আমার জন্ম। তুর্কী সৈনিক দলে কয়েক বছর আগে পাকাপাকি নাম লিখিয়েছি। আগে আমার পিতৃপুরুষ রাজপুত রাজাদের অস্ত্র বানাত।”

সুলতান বিস্মিত হন বিক্রমজিতের মুখে তুর্কী ভাষার দক্ষ ব্যবহারে। সুলতানের বিস্ময় বুঝতে পেরে কুতুবুদ্দিন বিস্তারে বলে, “জাহাঁপনা, বিক্রম একজন ওস্তাদ কারিগর। হিন্দুস্তানের তরবারি বানাতে ওর জুড়ি নেই। এই কয়েক বছরে সে তুর্কী আর পাখতুনি ভাষা শিখে ফেলেছে খুব তাড়াতাড়ি। বেশ কিছু কারিগরকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে হিন্দুস্তানি অস্ত্র বানাবার জন্য। খুবই বিশ্বাসী একজন কর্মী বিক্রমজিত। এদেশের মানুষের কিছু অভ্যেস ও আমাকে জানিয়েছে, যা আমাদের রণকৌশলে সাহায্য করবে বলে মনে হয় আমার।”

“আমাদের বিপরীতেও যেতে পারে ওর পরামর্শ। যতই হোক, এই হিন্দুস্তনের মাটি ওকে জন্ম দিয়েছে। তবে আমাকে যদি ও আশ্বস্ত করতে পারে, তবে অবশ্য ভেবে দেখা যেতে পারে”, সুলতান শিহাবুদ্দিন প্রখর জিজ্ঞাসু চোখে বিক্রমজিতের দিকে তাকিয়ে থাকেন।

মাথা ঝুঁকিয়ে বিক্রমজিত বলে, “তুর্কী সৈন্যবাহিনীতে আমার পুনর্জন্ম হয়েছে জাহাঁপনা। বেশ কয়েকবছর আগে আমি এক তুর্কী সেনাবাহিনীতে কিছুদিনের জন্য কাজে যোগ দিই। আমার প্রায় অথর্ব ঠাকুরদা আর এই দেশের মাটি ছেড়ে বিদেশ যেতে আমি রাজি হইনি। বিক্রমগড় থেকে তুর্কী শিবির গুটিয়ে নেওয়ার পর আমি গ্রামে ফিরে যাই। তখন আমার ঠাকুরদা ভীষণ অসুস্থ্য। জরা তাকে গ্রাস করেছে। ছেলেবেলা থেকে বাপ-মা ছিল না, আপণ বলতে সেই ঠাকুরদা। কিন্তু ঠাকুরদার সেবা করা আমার কপালে ছিল না। গাঁয়ের পঞ্চায়েত আমি ম্লেচ্ছ শিবিরে কাজ নিয়েছিলাম এই অপবাদ দিয়ে আমাদের একঘরে করে। বিনা চিকিৎসায় আর অনাহারে আমার ঠাকুরদা ধরাধাম ছেড়ে চলে যায়। আমি একা হয়ে যাই। পঞ্চের কাছে মিনতি করি আমাকে সমাজে ফিরিয়ে নেবার জন্য। তারা শোনেনি সুলতান! আমাকে সমাজে ফেরার জন্য শর্ত দেওয়া হয়। চোদ্দ দিন নির্জলা উপবাস করতে হবে, তবেই সমাজ আমাকে ফিরিয়ে নেবে। শর্ত মেনেছিলাম। বিক্রমগড় আমার জন্মভূমি। এই মাটি ছেড়ে আমি কোথায় যাব? কিন্তু নির্জলা উপবাসে জলপিপাসায় ছাতি ফেটে যেতে একদিন যখন নদীতে নেমে জল খেতে গিয়েছি, গ্রামের লোকেরা পঞ্চায়েতে নালিশ জানাল। পঞ্চের বিচারে আমাকে একগলা গোবরে ডুবিয়ে রাখা হল সাতদিনের জন্য। বরাত জোরে এক আফগান সেনা আমাকে দেখতে পায়। সে আমাকে উদ্ধার করে বিক্রমগড়ের সৈন্যশিবিরে নিয়ে গিয়ে শুশ্রূষা করে। তারপর রাজপুতেরা তুর্কীদের কাছ থেকে বিক্রমগড় কেল্লা আবার কেড়ে নেয়। আমি সৈন্য দলের সাথে কাবুল চলে যাই।”

এই পর্যন্ত বলে হটাত চুপ করে যায় বিক্রমজিত। সুলতান শিহাবুদ্দিনের চোখ জ্বলতে থাকে। হিন্দুস্তানের সমাজে নিপীড়িত এই যুবক আর যাই করুক, তাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করবে না, এই বিষয়ে তিনি নিশ্চিত হয়ে যান। তাই কুতুবুদ্দিনের দিকে ফিরে জিজ্ঞেস করেন, “যুদ্ধ নিয়ে কী বলার আছে এর? যোদ্ধা না হলে যুদ্ধের বিষয়ে জ্ঞান থাকা অসম্ভব।”

কুতুবুদ্দিন ব্যগ্রতা দেখিয়ে বলে “অস্ত্রের দায়িত্বে থাকায় এর বুদ্ধির পরিচয় আমি পেয়েছি জাহাঁপনা। রাজপুতদের চালচলন ও ভালই বোঝে। কথায় কথায় আমাকে বলেছে, রাজপুত সেনারা সব ভোর রাত্রে উঠে প্রাতক্রিত্য আর গোসল করে। তারপর ওদের আরাধ্য দেবতাদের পুজো করে, অস্ত্রেসস্ত্রে সুসজ্জিত হয়ে, নাস্তা করে বেরিয়ে পড়ে যুদ্ধে, যখন সূর্য ওঠে পুবাকাশে। সূর্যের আলো যতক্ষণ, ততক্ষণ যুদ্ধ। বিক্রমজিতের মতে, ওদের অপ্রস্তুত অবস্থায় ভোর রাতে যদি নদীর পাড়েই ওদের আক্রমণ করা যায়, তবে যুদ্ধ জয়ের সম্ভাবনা বেশি।”

সুলতান শিহাবুদ্দিন তার মণিমাণিক্য খচিত সিংহাসন থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলেন, “চমৎকার! আমি একটা যুদ্ধের উপযুক্ত সময় খুঁজছিলাম। এই যুবকের বুদ্ধিতে আমি প্রসন্ন।”

সুলতান তার গলার থেকে বহুমূল্য হার খুলে ছুঁড়ে দেন বিক্রমজিতের দিকে। তারপর কুতুবকে বলেন, “আজ ভোর রাতেই পরিকল্পনা মাফিক যুদ্ধের প্রস্তুতি নাও। আমি স্বয়ং যুদ্ধে যাব। এ যুদ্ধ আমাদের জিততেই হবে। শুনেছি দেহলী থেকে রওনা দিয়েছে গোবিন্দ রাই। তার যাত্রা রুখে দেওয়ার জন্য আমি অবশ্য অন্য ব্যবস্থা করে রেখেছি।”



সরস্বতী নদীর জলে গভীর রাতের আঁধার তখনো লেপ্টে আছে। অমাবস্যার রাত। এখনো রাত ভোর হতে এক প্রহর বাকি। নদীতীরের ঘন জঙ্গল ভেদ করে একে একে রাজপুত সেনারা প্রাতঃকৃত্যের জন্য লোটা হাতে নদীর ধারে এসে বসছে। রাতচরা পাখিরা টি টি শব্দে মাথার উপর দিয়ে চলে যাচ্ছে। শীতের রাতের শেষে হাওয়ার তেজ বাড়ছে। ব্রাহ্মমুহূর্তে রাজপুত সেনানী আসন্ন দিনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। যাদের প্রাতঃকৃত্য সারা হয়ে গেছে, তারা নদীর জলে অবগাহন করে মৃদু স্বরে মন্ত্রোচ্চারণ করছে। বাতাসে যুদ্ধের গন্ধ। তাই প্রতিটি দিনই ঈশ্বরের কাছে প্রাণ ভিক্ষে করে নিতে হয়। যত সময় এগোচ্ছে, ততই মানুষের ভিড় বাড়ছে নদীর পাড়ে। ঠিক সেই মুহূর্তে ঘটল অঘটন। 

যেন জঙ্গলে আচমকা তুফান উঠল। আঁধার চিরে রাজপুত সেনাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল কালো পোশাক পরা, মুখোশ আঁটা তুর্কী সেনা। অন্ধকারেও তাদের চোখ জ্বলে। অপ্রস্তুত রাজপুত সেনারা কচুকাটা হতে লাগল নিঃশব্দে। যারা সুযোগ পেয়ে পালাতে গেল, তারা গাছের আড়াল থেকে ছোঁড়া তিরের অব্যর্থ নিশানায় লুটিয়ে পড়ল নদীর ধারে। সরস্বতী নদীর কালো জল লাল হয়ে উঠল রাজপুত রক্তে, কিন্তু অন্ধকারে তা দেখা গেল না। 

রাজপুত সেনাশিবিরে তুর্কী আক্রমণের খবর পোঁছতে সময় লাগল না। শঙ্খধ্বনিতে যুদ্ধের ইশারা পোঁছে গেল শিবিরে শিবিরে। যে যেমন অবস্থায় ছিল, তেমনই যুদ্ধের জন্য অস্ত্র ধরল। আস্তাবলে ঘোড়াদের পিঠে জিন চাপিয়ে লাফিয়ে উঠল যত ঘোড়সওয়ার। কিন্তু সেখানেও পৌঁছে গেছে তুর্কী অন্তর্ঘাতী সেনারা। হাতে বল্লম তুলে নিতে সময় পেল না যারা, তারা তুর্কী ঘোড়সওয়ারদের আচমকা আঘাতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ল। রাজপুত শিবিরে ত্রাস সৃষ্টি হলেও নিজেদের গুছিয়ে নিয়ে তারা যুদ্ধে নামল। হাতির আস্তাবলে হাতি বার করতে সময় লেগে গেল। রাজা পৃথ্বীরাজ স্বয়ং অন্ধকারে যুদ্ধে নামলেন ঘোড়ায়। যুদ্ধের ছক সাজানোর সময় দিল না বলে অভিসম্পাত করলেন ঘুরের সুলতানকে। 

পুবাকাশ তখন ফরসা হচ্ছে। আলো ফুটে ওঠায় পৃথ্বীরাজ ঘোড়া ছোটাতে ছোটাতে দেখলেন অসংখ্য রাজপুত সেনা শিবিরের বাইরে নিহত। তাদের রক্তে ভেসে যাচ্ছে তারাই-এর মাটি। বীর পৃথ্বীরাজকে হারানো এত সহজ নয়। তিনি কিছুতেই এই তস্করের মতো আক্রমণ মেনে নিতে পারছিলেন না। দেহরক্ষীদের বলয় থেকেই রাজা পৃথ্বীরাজ প্রবল বাণ নিক্ষেপ করতে লাগলেন তুর্কী সেনাদের দিকে। তারা পিছতে লাগল। পৃথ্বীরাজের সেনাদল সউল্লাসে, তীব্র বেগে ঘোড়া ছুটাল তাদের পিছু নেবে বলে। কিন্তু তুর্কীদের ঘোড়া অনেক জোরে দৌড়ে জঙ্গলের ভিতর হারিয়ে গেল। যে মুহূর্তে পৃথ্বীরাজের সেনাদল তুর্কীদের পিছু ধাওয়া করা থেকে নিবৃত্ত হল, ঠিক তখনি আর এক দিক থেকে আচমকা আঘাত এল। 

উপর্যুপরি আঘাতে রাজপুত সেনারা নাজেহাল। পৃথ্বীরাজের কাছে সংবাদ এল দেহলী থেকে সৈন্যদল নিয়ে তারাই আসার পথে নিহত হয়েছে গোবিন্দ রাই। তবু হাল ছেড়ে দেবার পাত্র নন রাজপুত রাজা। কিন্তু ছত্রভঙ্গ সেনাদের নেত্রিত্ব দেবে কে? তার সবচাইতে দক্ষ সেনাপতিদের অনেকেই নিহত। পৃথ্বীরাজের একান্ত দেহরক্ষী রাজার দিকে ঘোড়া ঘুরিয়ে চেঁচিয়ে উঠল, “পালাতে হবে মহারাজ। আমরা সম্পূর্ণ পরাস্ত। এ এক অন্যায় যুদ্ধ! রাতের আঁধারে হিংস্র পশু ছাড়া কে বা আক্রমণ করে! তবে আপনার প্রাণ বাঁচাতে হবে আমাকে। যুদ্ধক্ষেত্র থেকে প্রস্থান করাই উচিত।”

পৃথ্বীরাজ আজ পর্যন্ত কোনও যুদ্ধে হার স্বীকার করেননি। যুদ্ধে পশ্চাৎপসারণ বীরোচিত কাজ নয়। তবু মন বলছে, এ দেশের মাটিতে সূর্যের আলো থাকলে তবেই যুদ্ধ হয় - এই নিয়ম ভেঙে যদি তুর্কীরা ভুল না করে থাকে, তবে আজ প্রাণ বাঁচাতে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে সরে যাওয়া অন্তত হিন্দুস্তানের মানুষ মেনে নিতে পারবে।

কুতুবুদ্দিন আইবককে তার প্রধান সঙ্গী ঘোড়ার উপর থেকে অপসৃত রাজপুত রাজাকে দেখিয়ে বলল, “জনাব, ওই পালিয়ে চলেছে আজমেঢ় দুর্গের অধিপতি, রাজপুত রাজা রাই পিথোরা। চলুন ওর পিছু নিই।”

কুতুবুদ্দিন নিজের ঘোড়ার লাগাম টেনে থামিয়ে দিয়ে হুঙ্কার দিয়ে বলে উঠল, “এই দেশ ঘুরের সুলতান মহামহিম মহম্মদ শিহাবুদ্দিনের। যুদ্ধে রাজপুতেরা নির্মম ভাবে পরাজিত। আমরা জয়ী। যাও যুদ্ধ জয়ের রনভেরি বাজাও। সুলতানের জয় হোক।”

প্রখর সূর্যের আলোয় রাজপুত সৈনিকদের রক্তে ভিজে তারাই-এর মাটি রাঙা হল। বিজয় ভেরী আর রণদামামা বাজিয়ে জয়োল্লাস করছে শিহাবুদ্দিনের সেনারা। কুতুবুদ্দিনের কাফিলা চলল দেহলীর দিকে। দুচোখে তার হিন্দুস্তানের সুলতান হওয়ার স্বপ্ন। 

----


1 comment:

  1. যেন হারিয়ে গেছিলাম এক অন্য দুনিয়ায়। অসাধারণ অভিজ্ঞতা! অশেষ শ্রদ্ধা জানাই দাদা….🙏

    ReplyDelete

FACEBOOK COMMENT