DEHLIJ

জাগরী বন্দোপাধ্যায়

সং থেকে ফড়েঃ ঔরশীষের কবিতার এক দশক

 


 

 

জাগরী বন্দোপাধ্যায়
সং থেকে ফড়েঃ ঔরশীষের কবিতার এক দশক
 

31/7/20

A disorder associated with episodic mood swings ranging from depressive lows to manic high. Manic episodes may include symptoms such as high energy, reduced need for sleep and loss of touch with reality. Depressive episodes may include symptoms such as low energy and atypical/typical interest towards death.

অতঃপর নচিকেতা কহিলেন ,
"স্বভাব  মর্ত্যস্য জদন্তকইতং সরবেন্দিয়ানাং জরয়ন্তি তেজহ
অপি সর্বং জীবিতমল্ল মেব তবৈব বাহাস্তব নৃত্য গীতে ! "  
 

অর্থাৎ হে যমরাজ ! আপনার বর্ণিত ভোগ্যবস্তু সমূহ কল্য পর্যন্ত থাকিবে কিনা, তাহা অনিশ্চিত । উহা মানুষের ইন্দ্রিয় সকলের শক্তি ক্ষয় করে । অধিকন্তু সকলেরই জীবন স্বল্প । অতএব আপনার নৃত্য গীতাদি আপনার ই থাকুক ।  এ কথা এক  পরমাশ্চর্য যে জীবনের আবাহন ও জৈবিকতা কে অস্বীকার দুই ই ঘটেছে কবিতার মাধ্যমে । এ বিশাল করম সম্পাদন করতে পারে এমন মাধ্যম আর নাই  ।

১/৮/২০
 

আমার নিকটজন আমায় ছেড়ে চলে যায় ,আমি কোন ট্রিটমেন্ট প্ল্যান অনুসরণ করিনা । আমার ঘরে অচেনা নারী ঘুম ভেঙ্গে সুপ্রভাতে উঠে বসলে আমি তাকে এক গেলাস জল দি , তার নাম কি নদী নয় ? মাতার মুখ মনে পড়লে কেবল মনে পড়ে তার গর্ভের আঁধার । শ্লেষ্মা । ক্লেদ । প্রিয় বিদূষক মারা গেছেন বচ্ছর দেড়েক আগে । এমতাবস্থায় লিখন শুরু হয় । লিখলাম তিনটি পুস্তিকা  । অক্ষরে ভরা তিনটি বই । অক্ষর কি ? অক্ষর সেই ব্রহ্ম যা চেতনা কে রূপ দ্যায়  আর কেমন সে চেতনা?                                            
 

"নাহং মন্য সুবেদেতি নো ন বেদতি বেদ চ                                                                         
ইয়ো নস্তদবেদ তদবেদ নো ন বেদতি বেদ চ ।"

কবি বলেছেন ও লিখছেন । ফের সেই কবি ও অক্ষর  । কবিকে সব জানা যায়না , তাকে একটুও জানিনা তাও নয় , অল্প জানি সেও নয় , অল্প জানিনা তাও নয় । তাকে জানি বলার অর্থ আমি তার কিছুই জানিনা , যদি বলি কিসস্যু জানিনা তাহলে বোধহয় একটু হলেও জানি ।  কবি এক চেতনা মাত্র যাকে যে মুহূর্তে বিজ্ঞাত হবে সেই মুহূর্তে তুমি তার কবিতা থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে স্থাপনা করছ এক অপরতার মধ্যে , যা ফের তোমাকে কেবল বিচ্ছিন্ন ই করবে তার সৃষ্টি চেতন কে অনুভূত করা থেকে, আত্মস্থ করা থেকে। জিয়ন্তে আলাদা হয়ে যাবে তুমি । এক অমোঘ বাই সাইকেলের মত তোমার জানা না জানার চাকা ঘুরতে ঘুরতে তোমায় ফাঁসিয়ে দেবে পরাৎপরে , হরি হে । প্রিয় বিদূষক মারা গেছেন রাজধানী তে ।
 

২/৮/২০
 

পরম চেতন নিজেকে কাব্য হিসাবে অনুভূত করেছেন , জেনেছেন নিজেকে কবিতা বলে আর হয়ে উঠেছেন  কবিতা । এ হল  কাব্য হিসাবে চেতন দেবের শুভ সম্ভূতি । ঔরশীষ ঘোষ-এর চেতন যে রূপ প্রাপ্ত করেছেন , তাকে পাঠক অক্ষরদেব-শ্রুতিদেব-দৃষ্টিদেব -মনন দেব  এর সাহায্যে প্রাণ ও অপ্রাণের মধ্যবর্তী সেই ব্যান-সময়ে পাঠ করে তাকে ফের জন্ম দিচ্ছেন যা বোধহয় অনুভূতি । আমাদের সকল বাকের উদ্গাতা যে ব্যান বায়ু , সকল করমের হোতা সেই তিনি অর্ধেক কবিতা হয়েছেন কবির দ্বারা , বাকি অর্ধেক তাকে কবিতা করে তুলেছি আমি , পাঠক । সেই অহংকারে মটমট করতে করতে সামান্য কাব্যালোচনায় নামলুম । তবে হ্যাঁ ! সং মারা গেছে  পিঙ্গলায় চালিত পুরাতন বাক এর মত । নতুন অক্ষরযুক্ত প্রাণের অন্তর্মুখী গতি চালিত হয়েছে । জন্ম নিয়েছেন ফড়ে ।                                       

ঔরশীষ ঘোষ যৌবনের প্রথম উন্মেষ কাটাতেন কফি হাউসের বারান্দায় , বাউল মেলার মাঠে  নবীন প্রবীণ গভীর অগভীরদের সঙ্গে । ভূমি ও নারী আবিষ্কারে প্রথম বেলার কৃষকের মত অভিজ্ঞতার হান্টার পেরিয়ে লিখে ফেলেন ক্লাউনের ডার্ক রুম ।  তখন কবি নিঃস্বার্থ বন্ধুর মত অবিশ্বাস্য , কিছুবা অতিসরল এক তরুণ কিছুবা প্রেমিক , এবং জন্মযন্ত্রনায় ভারি বিহ্বল । সে আরেক কবি বন্ধুর বাড়ি গিয়ে বলে আস্তে পারতো " লেখাটা ছাড়িস না আর তোদের বাড়ির মাংসে খুব ঝাল হয়" হাড় কাটা বাদ দিয়ে একটি বাড়ির মাংস আবিষ্কার করতে গেলে কবি কে হতে হয় যোদ্ধা । তখন কবির যোদ্ধা বয়েস , দৈনিক হাফ পাউন্ড তামাক , এক পাউন্ড পাথুরে  রুটি ,এক পাউন্ড পশুমাংস , চার ক্যান বিয়ার , দুটি ব্যর্থ প্রেম ,  এক পাতা স্যারিডোন , আর সামান্য সূর্যালোক-এ সেই যোদ্ধার কাল কেটে যেত সালোকসংশ্লেষ বড় সহজ ও এবান্ডান ছিল এমনকি যুদ্ধের মারী দিনগুলিতেও ।

 
Move him into the sun at home whispering of fields unsown ...always it woke him even in France .

 
এই ছিল সং ।  " আরো কত স্পর্ধা বাকি ।" কন্যার অপর প্রেমিকের শরীর পড়া দাগে যে নিজের মুখ রঙ করে নেয় । তখন তাঁর সমস্ত ছবি ই প্যানোরামা । ঘোষের পো কিছু ছাড়েনা ।

"মেঘের খোলস ছিঁড়ে উন্মাদের কাঞ্চনজঙ্ঘা ফুলস্কেপ । "

তার কবিতার আত্মহত্যাকামী যুবক তখন ঝাঁপ দেয় নারীর দুই স্তন মধ্যবর্তী রোপওয়ে থেকে , কারণ সে সময়ে অর চেয়ে প্রকৃষ্ট আত্ম-নিধন তীর্থ কবির জানা ছিল না
রোপ ওয়ে থেকে ঝাঁপ দিয়ে
পাখির স্বভাব পায়
ছাই রঙের যুবক  । "
সং কিনা ! মৃত্যুকেও রঙে প্রকাশ করত । ছোট ছোট স্বপ্ন যারা প্রতি মুহূর্তে মানুষকে নির্লজ্জ প্রতারণা করে সেসব তাকে অস্থির করত।
প্রথমত প্রথম যৌবন প্রতিশ্রুতি ভঙ্গে  ব্যথিত হয় , মিথ্যাকে সত্য হতে ভিন্নতর এক পরিচয় দিয়ে বসে , অতঃপর নির্মমতা , হিংসায় , ব্যাতিচারে তাদের হাসি পেতে
থাকে । তখন তারুণ্য নিজের পরিচয় দেয়

"অগ্নির্ব্যা অহমস্মীত্য ব্রবীজ্জাতবেদা বা অহমস্মীতী
বায়ুর্বা অহস্মীত্য ব্রবীন মাতরিশ্বা  বা অহ্মস্মীতী !"

আমি ই আগুন ও জাতবেদা , আমি ই বায়ু ও মাতরিশ্বা বটি । আমি ব্রহ্মের অর্ধ-চেতনের রূপকার বটি ।

৩/৮/২০

মহাপৃথিবীর পেটের মধ্যের লাভায় ঝলসেটলসে কবি যখন উঠে দাঁড়ালো  ফের তখন সে পরিপক্ক , আপন গ্রাম-সীমানার বাইরে নিজস্ব পরিচয় তৈরি করতে কবি তখন বাধ্য  , তৈরি হল এক ধুসর পাণ্ডুলিপি । তাকে আমার বেশ লেগেছিল । যেন প্রথম চাষের কাদামাটি মেখে লখিন্দর গেছেন দূর বাণিজ্যে ।তার ঘর মনে পড়ে , একি সঙ্গে মনে পড়ে গেরস্ত শ্মশানটিকেও । সমস্ত জন্মদাগকে একীভূত স্বীকার করে নিয়ে এক নতুন জন্ম যেন ! চোখ ধাঁধানো সাইকোডেলিক আলো নেই , ঝিমঝিম নেশা নেই এক তাল মাটির স্নিগ্ধতা নিয়ে সেইসব কবিতারা বলে উঠেছিল
"যখন ভোরের দিকের
ধুতিপরা একটা লোক এসে
আকাশের গা থেকে খুলে নেয় এক এক করে সব নক্ষত্র  ..."  
বিশ্ব চেতনা নিজের রূপেই আস্তে আস্তে রূপবান...অতএব অনেক পাথর জড় হয়েছিল
সেই পুস্তকের দুই মলাটের মাঝখানে  । ভেবেছিলুম শান্তির প্রক্রিয়া , ভেবেছিলুম অশান্তকে স্তব্ধ হতে বলছেন বাকদেব ...কিন্তু

৪/৮/২০

অতঃপর যোদ্ধা বাড়ি ফিরলো । কালপুরুষ ফেরেন না কিন্তু তার তীর খানি  ফিরে ফিরে আসে । সত্যর সন্ধানে  সং  আদত বদলেছে , বদলে নিয়েছে অসুখ , মেনে নিয়েছে বিচ্ছেদ এবং দেখা দিয়েছে এক ভারি নমনীয় শয়তান হয়ে , যাকে বলে ফড়ে । আর কে না জানে শয়তানের হাতেই থাকে সত্যির চাবিকাঠি । মিথ্যের ইডেন-কে সে দেখিয়ে দ্যায় কাম , লোভ , ঈর্ষার মহামারী , বদলে দাবী করেনা কিছুই । শয়তান অর্থে এক নির্মোহ ! কবি একাসনে বসে একটি মহৎ বস্তু ত্যাগ করতে পারেন , সেটি ভক্তির মোহ ! কবির শয়তান হয়ে ওঠা তবে সাজে ।
"কে আমার ভাত বেড়ে তার তার পাশে ঘুমিয়ে পড়েছে " অপেক্ষার অপেক্ষাও এক মোহ যাকে কাটা ঘুড়ির মত লুটিয়ে দিয়েছে সে । মাত্র ১৩ টি কবিতা আছে এই দঙ্গলে । ভারি শান্ত উচ্চারণের লেখা ।  কারণ ফড়ে
"আজকাল কথা বলে না তেমন
পেয়ালায় মুখ গুঁজে কি জানি ভাবতে থাকে । "

এক নিঃশব্দ পদচারণার পদ্য অনেকদিন পর উপহার দিলেন ঔরশীষ । মানুষের চলা প্রমাণিত হয় পরিবর্তনে । সং যদি আঘাতে মৌন কিশোর ছিল ,  জন্মদাগের  লোকটি সে আঘাত পেরিয়ে উঠে দাঁড়ানো নিশান  , আর ফড়ে ?  ফড়ে হল জলে ভিজে বিবর্ণ, সামান্য ক্লান্ত সে নিশান  উত্তুরে বাতাসে একটু একটু দোল খাওয়া ।  এক আঘাতবিহীন স্বীকার আছে তার এই কবিতাগুলিতেও ।

"জুতো আর পেরেকের সম্পর্ক কোনোকালে ছিলনা"

যেভাবে " মানুষ মানুষের মুখ ভুলে যায় । " এই উচ্চার খানিকটা জন্মদাগ হ্রস্বস্মৃতি তেও ছিল , নয়নতারার পদ্য গুলিতে এই  গন্তব্য-উদাসীনতা পেয়েছিলাম । এই সিরিজটি তে যা নতুন তা হল পৃথিবীর প্রতি টান । সমগ্রতার প্রতি মমতা । গণ্ডী বোধহয় তার বহু ছড়িয়ে গেছে এই বাধ্যতামূলক প্রবাস-বাসের কালে ।

"স্বল্প হেসে পরিসর করে দেব " র মত সহজ স্বাভাবিক বৈরাগ্য তার কবিতায় আগে দেখিনি।

 ৫/৮/২০

এই ১৩ টি ক্ষুদ্রাকৃতির কবিতার সিরিজের লেখা গুলিতে যে কয়টি বিশেষত্ব অন্তত আমি লক্ষ করতে পেরেছি প্রথমত পাই এক দ্রোহ ।  এক অন্তর্লীন মৃত্যুমোহ দেখতে পাই যা আসলে দ্রোহ । কবিতা ২ ও কবিতা ১০ যেন দ্বিতীয় নাচিকেত মন্ত্র ।  কিছু কিছু ক্ষেত্রে কবি সুস্পষ্ট করে দিয়েছেন মরণ কে তিনি কোন চক্ষে দেখতে চান ।  এক রাস্তায় চলতে চলতে বহু জটপাকানো রাস্তার দঙ্গলে কেবল এসে পড়াই মরণ নয় , মরণ হল সেই জট থেকে একটা নতুন রাস্তা  বার করে হেঁটে যাওয়া প্রকৃতে । কবিকে জীবনের প্রতিটি ছোট ছোট দৃশ্যকে নতুন করে দেখতে শিখিয়েছে । আমি দ্রষ্টার মুখের সেই অলক্ষ্য হাসি দেখতে পাই  দুটি একটি কবিতায় । দ্বিতীয়ত পাই এক দ্বিধা ।  আমরা আমাদের প্রেক্ষিত বেছে নেই , না আমাদের প্রেক্ষিত বেছে নেয় আমাদের কে ? এই জিজ্ঞাসা  মহত্তর ।

ইয়ন্মনসা ন মনুতে ইয়েনাহারম্নোমতম " । মনের দ্বারা যাহাকে চিন্তন করা যায় না  কিন্তু মনকে উদ্ভাসিত করে তোলেন যিনি ...সেই চেতন কি আমার নাকি আমি সেই চেতনের অংশ মাত্র ! মাটির দুনিয়ার চলার পথের দুধারের সকল কিছু কি আমরা অনুভব করছি নাকি তারাই নিজেদের কে অনুভূত করাচ্ছে আমাদের দ্বারা ? এক লক দর্শন এর আভাস পাই ।
 
তৃতীয়ত  পাই এক স্বীকার , এক মেনে নেওয়া । এর সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া কে গুলিয়ে ফেললে মুস্কিল হবে । এই মেনে নেওয়ার মধ্যে রয়েছে এক নির্লিপ্তি । কবির লেখা ব্যক্তিগত পরিসর থেকে বেরিয়ে এক বৃহত্তর দিক খুঁজে পেয়েছে । যা ক্ষুদ্রতর দিক কে সবিনয়ে আসন পেতে না দিলে পাওয়া যায় না , আসন পেতে দিয়ে কবি তার সামনে বসে থাকেন নি। হেঁটে চলে গেছেন পাহাড়ে পাথর তুলতে ।

"আজকাল মাঝে মাঝেই কামাই করছে ফড়ে
শুনেছি দুরের এক কারখানায় পাথর ভাঙ্গার কাজ পেয়েছে ..."

আমি বেশি উদ্ধৃতি দেবনা যথার্থ কারণে । কারণ , কিনে পড়বেন সুধী পাঠক ।
চতুর্থত পাই এক আত্ম পরিচিতির সঙ্কট , তা ছাড়া  লেখা সম্ভব ছিল না । " অন্য কারো জামা পরে ...সারাদিন " ঘুরতে হয় সকল মানুষকে । কবি কেবল অচেনা ঘামের গন্ধটুকু পান । পেয়ে বিব্রত হন । এটুকুই  ।

৬/৮/২০

আজ সকাল থেকে উপনিষদ পাঠ করা হয়নি তাই বন্ধুর কাছে ফিরে এলাম । বন্ধুর কাছে । শোন ছন্দ সংক্রান্ত কোন সমস্যা অন্তত আমার চোখে পড়েনি তবে পাংচুয়েশন টা আরেকবার কবি কে দেখে নিতে অনুরোধ করি।  ওয়ান লাইনার গুলো ঘ্যামা , কবি কে বলে দিস । ৭ নং কবিতার শেষ টা আরেকটু ভারি হলে কবিতাটি অতলস্পর্শ করত ।

কবি আর তুই কিন্তু দুটো আলাদা মানুষ । মনে রাখিস ।

1 comment:

  1. অনবদ্য বললেও কম বলা হয়।খুব ভালোলাগা

    ReplyDelete

FACEBOOK COMMENT