DEHLIJ

ঔরশীষ

দলপতি - একটি অনূদিত নাটক




উজেন ইআয়ন্সকো - অনুবাদ ঔরশীষ

(ইউজিন ইয়োনেস্কো রচিত 'দ্য লিডার' নাটকের অনুবাদ)


চরিত্রঃ

সঞ্চালক
তরুণ প্রেমিক
প্রেমিকা
পুরুষ ভক্ত
নারী ভক্ত
দলপতি

(গণমঞ্চের ওপর গণসাধারণের দিকে পিছন ফিরে দূরের প্রস্থান পথের দিকে তাকিয়ে আছেন সঞ্চালক। তিনি অপেক্ষারত দলপতির আগমনের। তাঁর দুই পাশে, প্রায় মঞ্চের দেওয়ালের সাথে মিশে, দাঁড়িয়ে দুই ভক্ত। একজন পুরুষ ও অপরজন মহিলা। তাদের দুচোখেও জমেছে অপেক্ষার মেঘ।)

সঞ্চালকঃ (কয়েক মুহূর্তের জন্য একই রকম উদ্বেগের সাথে তাকিয়ে থাকার পরে) ওই তো সে! ওই তো সে! এই পথের সীমান্তে দেখা যাচ্ছে তাঁকে! (ভক্তের মধ্যে আনন্দলহরি বয়ে গেল) ওই যে আমাদের দলপতি। তিনি আসছেন, তিনি আরো কাছে আসছেন আমাদের!  (বাধনহীন আনন্দ ধ্বনি শোনা গেল দর্শকের ভিড়ে) ভালো হয় যদি তিনি আমাদের না দেখতে পান... (দুই ভক্ত আরো বেশি দেওয়ালের সাথে মিশে যাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠলো।) সাবধান!! ( এর মাঝেই সঞ্চালক চেষ্টা করলো নিজের আনন্দকে হালকা ভাবে ফুটিয়ে তোলবার) জয় হোক! জয় হোক! আমাদের দলনেতা দীর্ঘজীবী হোক! (দুই ভক্ত আরো জড়োসড়ো হয়ে দেওয়ালের সাথে শরীর মিশিয়ে রেখেই যতটা সম্ভব গলা ও মাথা ঠেলে তুলে, চেষ্টা করছে তাদের দলপতিকে এক ঝলক দেখবার।)

 একই সাথে দুজন ভক্ত বলে উঠছে, 'জয় হোক! জয় হোক!' 'আনন্দ'! 'অপার আনন্দ'!

সঞ্চালক আরো একটু এগিয়ে গেল, চোখর ওপর হাত দিয়ে দূরবীন পাকিয়ে কী যেন দেখার মরিয়া চেষ্টা করলো, তারপর আরো কয়েক পা এগিয়ে গেল 'আহ্! তিনি চলে যাচ্ছেন! ক্রমশ মিলিয়ে যাচ্ছে! জলদি এসো! আমার সঙ্গে এসো তোমরা! ওনাকে হারিয়ে যেতে দেওয়া যাবে না'

স্টেজ থেকে প্রস্থান করলো দলপতি ও দুই ভক্ত। তিনজনের সমস্বর হাহাকারে স্টেজ মুখরিত৷ 'দলপতি! দলপতিইই! দলপতিইইইইইই!'

(কয়েক মুহুর্ত স্টেজ শান্ত। মঞ্চের দুপাশ দিয়ে প্রবেশ তরুণ প্রেমিক ও প্রেমিকার। হনহন করে হেঁটে এসে স্টেজের মধ্যিখানে একে ওপরের সাথে বেমক্কা ধাক্কা খেল।)

তরুণ প্রেমিকঃ ক্ষমা করুন ম্যাডাম! ম্যাডাম নাকী তোমায় আমি প্রিয়তমা বলে ডাকবো?

প্রেমিকাঃ মানে! কী বলতে চাইছেন? আমি তো আপনাকে চিনিই না!

তরুণ প্রেমিকঃ আমারও মনে হয় আপনি আমার সম্পূর্ণ অপরিচিত!

প্রেমিকাঃ তাহলে তো ল্যাটা চুকেই গেল! আমরা কেউ একে অপরের সঙ্গে মিলিত হইনি আগে

তরুণ প্রেমিকঃ অবশ্যই! কিন্তু আমাদের মধ্যে কোথাও একটা মিল খুঁজে পাই। হয়তো আমাদের মধ্যে বোঝাপড়ার সেই ভিত্তি রয়েছে, যা দিয়ে আমরা ভবিষ্যতের প্রাসাদ গড়ে তুলতে পারবো

প্রেমিকাঃ ভয় হয়! এমন কথা আমার ভিতর শীতল স্রোতের জন্ম দেয়! (এমন ভাব করলো যেন সে চলে যাচ্ছে)

তরুণ প্রেমিকঃ হে ঈশ্বরী! আমি তোমায় হৃদয় দিয়ে ফেলেছি

প্রেমিকাঃ আমিও! আমিও!

(তারা পরস্পরের বাহুতে মিশে যায়)

তরুণ প্রেমিকঃ আমি আর তোমার সঙ্গ ছাড়ছি না প্রিয়… তোমাকে আমি সরাসরি বিবাহ মঞ্চেই নিয়ে তুলবো এইবার।

(দুজনেই স্টেজ থেকে প্রস্থান করল আর স্টেজ কিছু সময়ের জন্য খালি)

সঞ্চালকঃ(স্টেজে প্রবেশ করে বাকি দুই ভক্তের সাথে) কিন্তু দলপতি কথা দিয়েছিলেন তিনি এখানে আসবেন!
পুরুষ ভক্তঃ তুমি একদম সঠিক খবর নিয়েছিলে?

সঞ্চালকঃ অবশ্যই

নারী ভক্তঃ এই পথ কী সত্যিই ওঁর পথের সাথে মেশে?

সঞ্চালকঃ একদম! তাঁর এখান দিয়েই যাওয়ার কথা, অনুষ্ঠান সূচিতে তেমনি উল্লেখ আছে

পুরুষ ভক্তঃ তুমি নিজের চোখ ও কান দিয়ে যাচাই করে নিয়েছিলে তো?

সঞ্চালকঃ তিনি আরেকজনকে জানিয়েছিলেন। অন্য একজনকে!

পুরুষ ভক্তঃ কাকে? কে সেই ব্যক্তি?

নারী ভক্তঃ সে কি বিশ্বাসযোগ্য? তোমার বন্ধুস্থানীয় কেউ?

সঞ্চালকঃ একজন প্রকৃত বন্ধু, যাকে আমি অত্যন্ত বিশ্বাস করি
(এমন সময়ে দূর থেকে সম্মিলিত কলরব শোনা গেল,’জয় হোক!’ ‘আমাদের দলপতি দীর্ঘজীবী হোক!’) নিসন্দেহে তিনি এসেছেন! ওই তো তিনি! জয় হোক! তোমরা শিগগিরি নিজেদের লুকিয়ে ফেলো! দেরী করো না!

দুজন ভক্ত প্রায় মঞ্চের দেওয়ালের সাথে মিশে গিয়ে বকের মত গলা বাড়িয়ে তাদের দলপতিকে দেখবার চেষ্টা করতে লাগলো আর সঞ্চালক চেয়ে রইল একদৃষ্টে সেই দূরের ভিড়ের দিকে)

সঞ্চালকঃ আমাদের দলপতি আসছেন। আমাদের উদ্দেশ্যে এগিয়ে আসছেন তিনি! তিনি ঝুঁকছেন। তিনি কনোদিন আনত হননি। (সঞ্চালকের প্রতিটি কথার সাথে ভক্তেরা নিজেদের গলা আরো বাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছ, তাদের শরীর জুড়ে প্রচণ্ড কম্পন) আমাদের দলপতি লাফাচ্ছেন!এবার তিনি মন্দিরের শিলান্যাস করছেন! তিনি সকলের সাথে হাত মেলাচ্ছেন! তিনি বুড়ো আঙ্গুল দেখাচ্ছেন সকলকে। তোমরা শুনতে পাচ্ছ?সকলে হাসছে। (সঞ্চালক ও ভক্তেরাও হেসে উঠল)। সকলে তাঁর হাতে শাবল ও গাইতি তুলে দিলো। তিনি কি করবেন ওই শাবল ও গাইতি দিয়ে? তিনি মসজিদের চূড়ায় আঘাত করলেন! এবার তিনি সকলকে নিজের অটোগ্রাফ দিচ্ছেন! তিনি এখন একটি গাভীকে আদর করছেন! একটি নধর দুধেল গাভী! দর্শকেরা হাততালিতে ফেটে পরল।তিনি নাচ করছেন! সেই গাভীর সাথে তাল মিলিয়ে তিনি নাচ করছেন। তাঁর সাথে পা মিলিয়েছে শহরের শ্রেষ্ঠ নর্তকী।তিনি সেই নর্তকীকে জড়িয়ে ধরে নাচ করছেন! (’জয় হোক!’ ’জয় হোক!’ ধ্বনি শোনা গেল)। তিনি সেলফি তুলছেন! এক হাতে নর্তকী ও অন্য হাতে গাভীকে জড়িয়ে ধরে তিনি সেলফি তুলছেন… তিনি ভক্তদের অভিবাদন জানাচ্ছেন! তিনি বহুদূর পর্যন্ত থুথু ছেটাতে পারেন।

নারী ভক্তঃ তিনি কি আসছেন? আমাদের দিকে আসছেন তিনি?

পুরুষ ভক্তঃ এই পথ কী সত্যিই ওঁর পথের সাথে মেশে?

সঞ্চালকঃ (দুজন ভক্তের দিকে ফিরে) খবরদার! একদম নড়াচড়া করোনা! তোমরা সমস্ত বিষয়টি নষ্ট করে দিচ্ছ

নারী ভক্তঃ কিন্তু, তাই বলে…

সঞ্চালকঃ চুপ থাকো! আমি তোমাকে শেষবার সাবধান করছি! আমি কী তোমাদের বলিনি আগেই যে তিনি তাঁর যাত্রাপথ নিজে ঠিক করেন… (ব্যাক স্টেজের দিকে ফিরে) জয় হোক! জয় হোক! জয় হোক দলপতির!
ভক্তেরা (আর নিজেদের আবেগ সামলাতে না পেরে)জয় হোক! আমাদের দলনেতা দীর্ঘজীবী হোক!

সঞ্চালকঃ তোমরা দুজন বকবক করা বন্ধ করবে! শান্ত হও! তোমরা সমস্ত কিছু নষ্ট করে দিচ্ছ

(ভক্ত দুজন চুপ করে যেতে সে আবার স্টেজের দিকে ফিরলো) আমাদের দলনেতা দীর্ঘজীবী হোক! (প্রচণ্ড উৎসাহের সাথে) হুররে! হুররে! দলপতি নিজের পোশাক বদলাচ্ছেন! তিনি এক গুহার ভিতর ঢুকে পরলেন! তিনি গুহা থেকে বেরিয়ে এলেন! দারুন! দূরান্ত!(ভক্তদেরও হাততালি আর বাহবা দিতে প্রবল ইচ্ছে হলো, তারা কনোরকমে মুখে হাত চেপে নিজেদের সংযত করলো।)
তিনি এখন নিজের গলায় উত্তরীয় পরলেন। এখন তিনি এক কাপ চা হাতে ভক্তদের প্রতি নিজের সাফল্যের কথা বলছেন। তিনি শুনছেন না কিছু। তাঁর অজানা কিছু নেই।এখনো তাঁর পাশে তাঁর প্রিয় গাভী দাঁড়িয়ে আছে। এবার তিনি বারান্দা রেলিঙ ঘেঁষে দাঁড়ালেন। রেলিং ভেঙে গেল।তিনি উঠে দাঁড়ালেন। কারো সাহায্য ছাড়াই তিনি উঠে দাঁড়ালেন। (চতুর্দিক থেকে ধেয়ে এলো করতালি ও উল্লাসের শব্দ) দারুন! অসাধারন! তিনি নিজের শাদা পাঞ্জাবী থেকে ময়লা ঝেড়ে নিলেন।

দুজন ভক্ত আনন্দে নিজেদের পা জোরে জোরে মাটিতে ঠুকতে ঠুকতে মুখ দিয়ে ‘হুপ’ ‘হাপ’ শব্দ করতে থাকলো।

সঞ্চালকঃ এবার তিনি তাঁর গদীতে চড়ছেন! হাজারো ভক্ত হাঁটু মুড়ে বসে আছে, তিনি তাদের পিঠের ওপর পা রেখে এগিয়ে চলেছেন। ভক্তেরা তাঁর হাতে ধারালো তলোয়ার তুলে দিল। তিনি বেশ মজা পাচ্ছেন ভক্তদের এমন ব্যবহারে। তিনি হাসছেন!

(করতালি ও উল্লাসের শব্দ)

পুরুষ ভক্ত নারী ভক্তকে উদ্দেশ্য করে বলল, তুমি শুনতে পাচ্ছ? শুনতে পাচ্ছ তুমি? ইসস! যদি আমি রাজা হতাম!

নারী ভক্তঃ আহ! আমার দলপতি!

সঞ্চালকঃ (এখনো দর্শকের দিকে পিঠ করে) তিনি গদীতে চড়ছেন। না! তিনি গদী থেকে নেমে আসছেন। একটি ছোট্ট মেয়ে তাঁকে ফুলের স্তবক উপহার দিল… তিনি কি সেটা গ্রহণ করবেন? হ্যাঁ! তিনি দু হাত বাড়িয়ে সেই স্তবক নিলেন… এবং মেয়েটিকে বুকে টেনে নিলেন… তিনি তাঁকে ‘আমার সন্তান’ বলে ডাকলেন…

নারী ভক্তঃ তিনি ছোট্ট মেয়েটিকে বুকে টেনে নিলেন আর তাকে নিজের সন্তান বলে সম্বোধন করলেন!

সঞ্চালকঃ তিনি ওকে নিজের গাভী উপহার দিলেন। ছোট্ট মেয়েটি কাঁদছে! ’জয় হোক!’ ‘আমাদের দলপতি দীর্ঘজীবী হোক!’

পুরুষ ভক্তঃ তিনি কি এদিকেই আসছেন?
নারী ভক্তঃ তিনি কি এদিকেই আসছেন?

সঞ্চালকঃ (সহসা মঞ্চের একদিক থেকে আরেকদিকে ছুটে গেল) তিনি চলে যাচ্ছেন! দেরী করো না! আমাকে অনুসরণ কর তোমরা

(তিনি ও তার পিছু নিয়ে দুই ভক্ত স্টেজ থেকে প্রস্থান করলেন… সকেলের কণ্ঠে ’জয় হোক!’ ধ্বনি

(কয়েক মুহুর্ত স্টেজ শান্ত। জড়াজড়ি করে প্রবেশ তরুণ প্রেমিক ও প্রেমিকার।তারা স্টেজের মধ্যিখানে এসে দুজন দুপাশে সরে গেল, প্রেমিকার হাতে বাজারের থলি)

প্রেমিকাঃ বাজার থেকে কয়েকটা ডিম কিনে আনা প্রয়োজন

তরুণ প্রেমিকঃ আমি ডিম খেতে ঠিক তোমার মতই ভালবাসি

(প্রেমিকা তার তরুণ প্রেমিকের হাত জড়িয়ে ধরে প্রস্থান করছিল, ঠিক সেই সময়ে করে ডান দিকের উইং দিয়ে তড়িঘড়ি সঞ্চালকের প্রবেশ।সঞ্চালক এসেই স্টেজের মধ্যিখানে দর্শকের দিকে পিছন করে দাঁড়িয়ে পরলো। তাকে অনুসরণ করে দুজন ভক্ত স্টেজের দুইদিক থেকে প্রবেশ করলো, এবং দুই ভক্তের সাথে প্রেমিক যুগলের ধাক্কা লাগলো)

পুরুষ ভক্তঃ দুঃখিত

তরুণ প্রেমিকঃ দুঃখিত! আমি সত্যিই দুঃখিত!

নারী ভক্তঃ আমি অত্যন্ত দুঃখিত

প্রেমিকাঃ আমি অত্যন্ত অত্যন্ত অত্যন্ত দুঃখিত

তরুণ প্রেমিকঃ উফ! উফ! উফ! আমি খুব দুঃখিত সকলের প্রতি!

প্রেমিকাঃ (তরুণ প্রেমিকের প্রতি) চলে এসো প্রিয়! (ভক্তদের দিকে ফিরে)ব্যস্ত হবেন না। কারো কোনও ক্ষতি হয়নি!

(প্রেমিকা তার তরুণ প্রেমিকের হাত ধরে স্টেজ থেকে প্রস্থান করল)

সঞ্চালকঃ (দূরের দিকে তাকিয়ে) দলপতিকে কেউ আগে টেনে নিয়ে যাচ্ছে তো কেউ পিছু টানছে, আর এখন সকলে মিলে তাঁর ধুতি ধরে টানাটানি করা শুরু করেছ! (ভক্তেরা তাদের নিজস্ব জায়গায় ফিরে এলো)। দলপতি হাসছেন।যখন ওরা তাঁর ধুলি খুলে নিয়েছে কিন্তু সে নিজের মত হেঁটে বেড়াচ্ছেন। তিনি গাছে ফলে থাকা ফুল ও ফলের স্বাদ নিচ্ছেন।তিনি গাছের শিকড়ও চিবিয়ে খাচ্ছেন। চোট ছেলেমেয়েরা তাঁকে বিরক্ত করছে। ওঁর সকলের ওপরেই সমান আস্থা। তিনি কালো টাকা শাদা করে দিচ্ছেন। তিনি নোট ছাপছেন। তিনি তাঁর ছাপা সমস্ত নোট নিষিদ্ধ করে দিচ্ছেন। তিনি পুলিশ থানার উদ্ধোধন করছেন। তিনি জজ সাহেবকে অনুপ্রেরণা দিচ্ছেন সঠিক বিচারের জন্য। তিনি বিজয়ী ও পরাজিত দুজনকেই সম্মাননা দিচ্ছেন। অবশেষে তিনি কবিতা পাঠ করলেন। প্রত্যেক ভক্ত আজ যারপরনাই আপ্লুত।

দুজন ভক্তঃ দারুন! দারুন!

সঞ্চালকঃ সকলের চোখে জল।(কান্নার রোল শোনা গেল উইং থেকে) চুপ!! (সকল শব্দ থেমে গেল) ভক্তেরা তাঁকে তাঁর ধুতি ফিরত দিয়েছে। তিনি সেটা আবার কোমরে জড়িয়ে নিলেন। এবার তাঁকে খুসি দেখাচ্ছে।দারুন! (দুজন ভক্তও সঞ্চালকের কাঁধের ওপর দিয়ে সেই দৃশ্য দেখবার চেষ্টা করে বিফল হল) দলপতি এখন নিজের আঙুল চুষছে।(দুই ভক্তের দিকে ফিরে) যাও! যাও! নিজের জায়গায় ফিরে যাও ও নিজের আচরণ আরো সংযত করো। আমার সাথে গলা মিলিয়ে বল, “দলপতি দীর্ঘজীবী হোক”

দুই ভক্তঃ (দেওয়ালের সাথে মিশে গিয়ে, চিৎকার করলো) দলপতি দীর্ঘজীবী হোক! দলপতি দীর্ঘজীবী হোক!

সঞ্চালকঃ চুপ! একদম চুপ! তোমরা সত্যি ডোবাবে দেখছি। সাবধান! দলপতি এদিকেই আসছেন!

পুরুষ ভক্তঃ (ওই একই ভাবে দাঁড়িয়ে থেকে) সাবধান! দলপতি এদিকেই আসছেন!

নারী ভক্তঃ সাবধান! দলপতি এদিকেই আসছেন!

সঞ্চালকঃ সাবধান!মুখ বন্ধ রাখো!উফ! তিনি চলে যাচ্ছেন! দেরী করো না! ওনাকে অনুসরণ কর! আমাকে অনুসরণ কর!

(তিনি ও তার পিছু নিয়ে দুই ভক্ত স্টেজ থেকে প্রস্থান করলেন।
(কয়েক মুহুর্ত স্টেজ শান্ত।

স্টেজের বাম দিক থেকে ছুটতে ছুটতে প্রবেশ করলো তরুণ প্রেমিক ও তার পিছুপিছু প্রেমিকা)

তরুণ প্রেমিকঃ (ছুটতে ছুটতে) তুমি আমাকে কখনোই ছুঁতে পারবে না। কক্ষনো না! (প্রস্থান)

প্রেমিকাঃ (ছুটতে ছুটতে) দাঁড়াও!প্লিজ এক মিনিট দাঁড়াও!

(কয়েক মুহুর্ত স্টেজ শান্ত। তারপর ওরা আবার ছুটতে ছুটতে স্টেজ পার করে গেল)

তরুণ প্রেমিকঃ (ছুটতে ছুটতে) তুমি আমাকে কখনোই ছুঁতে পারবে না। কক্ষনো না! (প্রস্থান)

প্রেমিকাঃ (ছুটতে ছুটতে) দাঁড়াও!প্লিজ এক মিনিট দাঁড়াও!

(ওরা আবার ছুটতে ছুটতে স্টেজ পার করে গেল)

(ডান দিকের উইং দিয়ে তড়িঘড়ি সঞ্চালকের প্রবেশ।সঞ্চালক এসেই স্টেজের মধ্যিখানে দর্শকের দিকে পিছন করে দাঁড়িয়ে পরলো। তাকে অনুসরণ করে দুজন ভক্ত স্টেজের দুইদিক থেকে প্রবেশ করলো এবং স্টেজের মধ্যিখানে এসে দাঁড়ালো।)

সঞ্চালকঃ আমরা ওঁকে হারিয়ে ফেলেছি

নারী ভক্তঃ আমাদের মন্দ ভাগ্য

সঞ্চালকঃ সম্পূর্ণ তোমাদের দোষে এই ঘটনা ঘটল!

পুরুষ ভক্তঃ একথা সত্যি নয়!

নারী ভক্তঃ এই অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যে

সঞ্চালকঃ তবে কী তোমরা বলতে চাও এমন আমার দোষে হয়েছে?

পুরুষ ভক্তঃ সেকথা বলিনি!

নারী ভক্তঃ আমরা কখনই সেরকম কিছু বলিনি

(ব্যাক স্টেজ থেকে জয়ধ্বনি শোনা গেল)

সঞ্চালকঃ হুররে!

নারী ভক্তঃ ওইদিক থেকে আওয়াজ এলো! (ডান দিক দেখিয়ে)
পুরুষ ভক্তঃ খুব ভালো! এসো আমার সাথে! দলপতি দীর্ঘজীবী হোক!

(তিনি স্টেজের ডান দিক থেকে প্রস্থান করলেন, পিছু পিছু দুজন ভক্ত)

দুজন ভক্তঃ দলপতি দীর্ঘজীবী হোক!

(এরপরে তরুণ প্রেমিক আর তার পিছু প্রেমিকা প্রবেশ করলো আর “আমাকে তুমি ধরতে পারবে না” এই বলতে বলতে প্রস্থান করলো। তারপর এলো সঞ্চালক আর তার দুই ভক্ত, তারাও জয়োল্লাস দিতে দিতে প্রস্থান করল, এরকম দুবার হওয়ার পরে অবশেষে তারা সকলে নানা উইং থেকে প্রবেশ করে সকলে মিলিত হল সেন্টার স্টেজে। ব্যাক স্টেজ থেকে শোনা গেল তিব্র উল্লাস আর করতালির শব্দ) দলপতি দীর্ঘজীবী হোক! দলপতি দীর্ঘজীবী হোক! দলপতি দীর্ঘজীবী হোক!

(আচমকা শূন্যতা নেমে এলো স্টেজ জুড়ে)

সঞ্চালকঃ সাবধান! দলপতি আসছেন! সকলে নিজের জায়গায় থাকো। কেউ নড়বে না।

(পুরুষ ভক্ত আর প্রেমিকা ডানদিকের দেওয়ালের সাথে আর তরুণ প্রে্মিক ও নারী ভক্ত বাম দিকের দেওয়ালের সাথে একে অপরের সাথে অন্তরঙ্গ হয়ে নিজেদের মিশিয়ে দিল)

পুরুষ ভক্ত আর প্রেমিকাঃ আমার প্রিয়! আমার সুজন!

তরুণ প্রেমিক ও নারী ভক্তঃ প্রিয়তম! আমার পরম!

(সঞ্চালক এরমাঝে আবার দর্শকের দিকে পিছন ফিরে স্টেজের মাঝখানে দলপতিকে খুঁজছে)

সঞ্চালকঃ একদম চুপ! তিনি এইমাত্র তার ধোকলা খাওয়া শেষ করলেন। এবার তিনি এইদিকেই আসছেন!

(ব্যাক স্টেজ থেকে দ্বিগুণ জোরে জয়ধ্বনি শোনা গেল)

 
সকলে মিলেঃ হুররে! হুররে!দলপতি দীর্ঘজীবী হোক!

( পুষ্পবৃষ্টি হতে শুরু করলো আর তার মাঝে দলপতি প্রবেশ করলেন স্টেজে। সেন্টার স্টেজে এসে তিনি কএক মুহূর্ত দাঁড়ালেন, তারপর বাম দিকে যাবেন ভেবে এক পা বাড়িয়েও শেষে ডান দিকে ফিরলেন আর বলিষ্ঠ কদমে ডান দিকে যেদিকে সঞ্চালক আর বাকি চারজন দাঁড়িয়ে সেদিকে এগোলেন। সঞ্চালকের কণ্ঠ থেকে শোনা গেল উত্তেজিত স্বরে “হুররে” বাকিরাও আরক্ত সুরে কোনোরকমে বললো “হুররে”, অবশ্য তাদের বিভ্রান্তির যথার্থ কারন আছে। দলপতি গেরুয়া ধুতি, শাদা পাঞ্জাবি, কাঁধে উত্তরীয় পায়ে চপ্পল আর মাথায় গান্ধী টুপি পরিহিত, কিন্তু সকলে অবাক হয়ে দেখছে, দলপতির কোন মাথা নেই।কাঁধের ওপরে একটা টুপি শুধু ভেসে আছে।তিনি আরও একটু থেকে প্রস্থান করলেন।)

 
নারী ভক্তঃ কিন্তু! কিন্তু! আমাদের দলপতির মাথা কোথায়?

সঞ্চালক: যার এত মেধা, বুদ্ধি ও মনন, তিনি মাথা নিয়ে করবেনই বা কী!

তরুণ প্রেমিকঃ তা ঠিক! তা অবশ্যই ঠিক! (প্রেমিকার দিকে ফিরে) আচ্ছা, তোমার কি যেন নাম?

(তরুণ প্রেমিক নারী ভক্তকে, নারী ভক্ত সঞ্চালককে, সঞ্চালক প্রেমিকাকে, প্রেমিকা পুরুষ ভক্তকে) তোমার? তোমার? তোমার?

(তারপর সকলে একসাথে এক অপরকে) তোমার কি যেন নাম?

1 comment:

  1. পড়লাম। ভালো লাগলো অনুবাদ। একবারে দেশীয় ছবি ফুটে উঠেছে। মঞ্চস্থ হলে ভালোই উপভোগ করা যাবে।

    ReplyDelete

FACEBOOK COMMENT